০১. ভূমিকা - চিকাগো বক্তৃতা - ০১ম খণ্ড - স্বামী বিবেকানন্দ রচনাবলী
০১. ভূমিকা
১৮৯৩ খ্রীষ্টাব্দে চিকাগোতে সে বিশ্বমেলা
১ হইয়াছিল, ধর্ম-মহাসভা
সেই উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত একটি
সন্মেলন। পাশ্চাত্যদেশে
আজকাল যে সকল বিরাট
আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী প্রায়
অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে,
সেগুলির সহিত সাহিত্য-কলা-এবং
বিজ্ঞান-সন্মেলন সংশ্লিষ্ট
করাও একটা রীতি হইয়া
দাঁড়াইয়াছে। যে বিষয়গুলি
মানবজাতির পক্ষে কল্যাণকর,
তাহাদের ইতিহাসে এইরূপ
প্রত্যেকটি অধিবেশন যে
স্মরণীয় হইয়া থাকিবে,
তাহাও আশা করা যায়।
আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে
মহা-সন্মেলনে একত্র-মিলিত
মানবমণ্ডলী চিকিৎসাবিজ্ঞান,
আইনবিদ্যা, যন্ত্রবিজ্ঞান
এবং জ্ঞানের অপরাপর শাখার
তাত্ত্বিক গবেষণা ও
কার্যকর আবিষ্কারের
আদান-প্রদান প্রভৃতি বিষয়সকলের
উন্নতি সাধনকেই তাঁহদের
লক্ষ্য বলিয়া মনে
করেন। মার্কিন সাহস ও
মৌলিক মনোভাব লইয়া চিকাগোবাসিগণই ভাবিতে পারিয়াছিল যে,
পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলির
একত্র সমাবেশই হইবে এই-সকল
সন্মেলনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ
সন্মেলন। এই-সকল
ধর্মের প্রতিনিধিগণের
প্রত্যেকে নিজ ধর্মবিশ্বাসের পক্ষে যে-সকল
যুক্তি উপস্থাপিত করিবেন,
আন্তরিক গভীর সহানুভূতি
সহকারে তাহা শুনিতে
হইবে-এরূপ সঙ্কল্পও করা
হইয়াছিল। এইরূপ সমমর্ষাদার ও সুনিয়ন্ত্রিত
বাক্-স্বাধীনতার ক্ষেত্রে মিলিত
হইয়া প্রতিনিধিগণ যে
সংসদ গঠন
করিবেন, তাহা
হইবে একটি
ধর্ম-মহাসভা।
ইহার ফলে
‘বিভিন্ন জাতির
ধর্মগুলির মধ্যে
ভ্রাতৃভাবপূর্ণ মিলনের
প্রয়োজনীয়তা’ জগতের
মানসপটে সুস্পষ্টভাবে
অঙ্কিত হইবে।
প্রতিনিধি প্রেরণের
জন্য যে
নিমন্ত্রণ ও
যথারীতি নির্বাচনের
প্রয়োজন, সে
বিষয়ে সম্পূর্ণ
অজ্ঞ থাকিয়াই
দক্ষিণভারতীয় অল্প
কয়েকজন শিষ্য
তাহাদের গুরুদেবকে
বুঝাইতে তৎপর
হইল যে,
হিন্দুধর্মের পক্ষে
বক্তৃতা দিবার
জন্য এই
সন্মেলনে তাঁহার
উপস্থিত থাকা
প্রয়োজন। অগাধ
বিশ্বাসবশতঃ তাহাদের
মানেই হয়
নাই, তাহারা
এমন কিছু
দাবি করিতেছে,
যাহা মানুষের
পক্ষে অসম্ভব।
তাহারা ভাবিয়াছিল,
বিবেকানন্দ সেখানে
উপস্থিত হইলেই
বক্তৃতা দিবার
সুযোগ পাইবেন।
স্বামীজীও শিষ্যগণের
মতোই জাগতিক
রীতিনীতি ব্যাপারে
অনভিজ্ঞ ছিলেন।
যখন তিনি
নিশ্চিতভাবে জানিলেন
যে, এই
কার্যে তিনি
ঈশ্বরাদেশ লাভ
করিয়াছেন, তখন
একাজে আর
কোন বাধা
থাকিতে পারে,
স্বামীজী একথা
ভাবিলেন না।
যথারীতি বিজ্ঞপ্তি
ও পরিচয়প্রত্রাদি
ব্যতিরেকেই হিন্দুধর্মের
প্রতিনিধি জগতের
সমৃদ্ধি ও
শক্তির সুরক্ষিত
দ্বারে প্রবেশ
করিতে চলিলেন-এই ঘটনা অপেক্ষা
হিন্দুধর্মের সংঘবদ্ধহীনতার
বৈশিষ্ট্য আর
অন্য কোন
উপায়ে স্পষ্টতর
হইতে পারিত
না।
চিকাগোতে উপস্থিত
হইয়া স্বামীজী
অবশ্য প্রকৃত
ব্যাপার বুঝিতে
পারিলেন। প্রেরিত
ও গৃহিত
আমন্ত্রণ অনুসারে
কোন পরিচিত
ও স্বীকৃত
সংস্থা তাঁহাকে
প্রেরণ করে
নাই। অধিকন্তু
প্রতিনিধি-সংখ্যা
বাড়াইবার সময়ও
উত্তীর্ণ, তালিকা
পূর্বেই পূর্ণ
হইয়া গিয়াছে।
ভারতে প্রত্যাবর্তনের
পূর্বে বস্টনে
যদি কাহারও
সহিত দৈবক্রমে
পরিচয়ের কোন
সুযোগ ঘটিয়া
যায় এইরূপ
ভাবিয়া কী
গভীর নৈরাশ্য
লইয়াই না
তাঁহাকে চিকাগোর
রুদ্ধদ্বার হইতে
ফিরিতে হইয়াছিল!
এইভাবে দূরদৃষ্টি
বা নিজের
কোন পরিকল্পনা
ছাড়াই তিনি
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধ্যাপক রাইটের
সহিত পরিচিত
হইলেন। রাইট
তাহার প্রতিভা
উপলব্ধি কারিলেন
এবং মাদ্রাজী
শিষ্যগণের মতো
তিনিও অনুভব
করিলেন যে,
আগামী ধর্ম-মহাসন্মেলনে জগৎকে
এই ব্যক্তির
বাণী শুনাইতে
হইবে। পরে
অধ্যাপক রাইট
তাঁহাকে লিখিয়াছিলেন,
‘আপনার নিকট
পরিচয়-পত্র
দেখিতে চাওয়া
আর সূর্যকে
তাহার আলোকদানের
কি অধিকার
আছে, জিজ্ঞাসা
করা একই
কথা।’ এইরূপ
প্রীতি ও
প্রভাবেই স্বামীজীকে
পুনরাই চিকাগোয়
পাঠাইয়াছিল এবং
সেখানে স্বীকৃত
প্রতিনিধির মর্যাদা
ও আসন
লাভের পথ
উন্মুক্ত করিয়া
দিয়াছিল। অধিবেশন
আরম্ভ হইলে
দেখা গেল
তিনি বক্তৃতামঞ্চে
উপস্হিত; সেখানে
একমাত্র ভারতীয়
বা একমাত্র
বাঙালী না
হইলেও তিনি
ছিলেন যথার্থ
হিন্দু ধর্মের
একমাত্র প্রতিনিধি।
অন্যান্য সকলে
কোন সমিতি,
সমাজ, সম্প্রদায়
বা ধর্মসংস্হার
প্রতিনিধিরূপে আসিয়াছিলেন।
একমাত্র স্বামীজীর
বক্তৃতার বিষয়বস্তু
ছিল-হিন্দুদের
আধ্যাত্মিক ভাবধারা;
সেদিন তাঁহারেই
মাধ্যমে ঐ
ভাবগুলির সর্বপ্রথম
সংজ্ঞা ঐক্য
ও রূপ
লাভ করিয়াছিল।
প্রথমে দক্ষিণেশ্বরে
নিজগুরুর মধ্যে
এবং পরে
ভারতে সর্বত্র
ভ্রমণকালে যে
ভারতীয় ধর্মকে
তিনি প্রত্যক্ষ
করিয়াছিলেন, এখানে
তাহাই তাঁহার
মুখ হইতে
নিঃসৃত হইল।যে
ভাবগগুলিতে সমগ্র
ভারতের ঐক্য
আছে, সেই
ভাবগুলিই তিনি
ব্যাক্ত করিয়াছিলেন,
অনৈক্যের কখাগুলি
তিনি বলেন
নাই। আন্তর্জাতিক
দৃষ্টিভঙ্গীসম্পন্ন ধর্ম-মহাসন্মেলনে (বিভিন্ন
ধর্ম-বিষয়ক)
প্রবন্ধপাঠে সতেরো
দিন সময়
লাগিয়াছিল। ১৯শে(সেপ্টেম্বর) স্বামী
বিবেকানন্দ লিখিত
প্রবন্ধ পাঠ
করেন। কিন্তু
যেদিন প্রতিনিধিদের
উদ্দেশে আনুষ্ঠানিক
অভ্যর্থনাসূচক বক্তৃতা
ও সেগুলির
উত্তর প্রদত্ত
হইল, সেই
প্রথমদিন হইতেই
স্বামীজী শ্রোতৃবর্গের
সংস্পর্শে আসিয়াছিলেন।
অপরাহ্নর শেষদিকে
তিনি অভ্যর্ধনার
উত্তর দিলেন।
যখন তিনি
সরল ভারতীয়
সম্বোধনে আমেরিকাবাসিগণকে
‘ভগিনী ও
ভ্রাতা’ বলিয়া
সম্ভাষণ করিলেন,
যখন সেই
প্রাচ্য সন্ন্যাসী
নারীকে প্রথম
স্থান দিলেন
এবং সমগ্র
জগৎকে নিজ
পরিবার বলিয়া
ঘোষণা করিলেন,
তখন সেই
মহাসন্মেলনে আনন্দের
যে শিহরণ
সঞ্চারিত হইয়াছিল,
তাহার বর্ণনা
তৎকালে উপস্থিত
শ্রোতৃবর্গের মুখে
বহুবার আমি
শুনিয়াছি। তাঁহারা
বলেন,’আমাদের
স্বজাতীয় কোন
ব্যাক্তি এভবে
সম্বোধন করার
কখা ভাবিতে
পারিল না!’
সেই মুহুর্ত
হইতেই বোধ
হয় তাঁহার
নিশ্চিত সাফল্যের
সূত্রপাত হইয়াছিল।
সন্মেলনের ব্যবস্থাপকগণ
চঞ্চল শ্রোতৃবর্গকে
কৌশলে শান্ত
করিবার জন্য
পরে অনেকবার
বলিয়াছেন, তাঁহারা
যদি ধৈর্য
ধারণ করিয়া
অপেক্ষা করেন,
তাহা সর্বশেষে
স্বামীজী একটি
গল্প বলিবেন
বা একটি
বক্তৃতা দিবেন।
এই ভাষণগুলির
কিছু কিছু
অংশ সুরক্ষিত
হইয়া এই
পুস্তকে অন্যান্য
বক্তৃতার মধ্যে
সংক্ষিপ্ত ভাষণরূপে
সন্নিবেশিত হইয়াছে।
হিন্দুধর্মের ইতিহাসে
এই সন্মেলন
এমন একটি
যুগের সূচনা
কারিয়াছে, যাহার
মূল্য ও
গুরুত্ব যতদিন
যাইবে ততই
গভীরত্বরভাবে উপলব্ধ
হইবে। প্রতিনিধিদের
সন্মেলন কেবল
বাহ্য চাকচিক্য
ও আড়ম্বরের
দিক হইতে
সভার প্রারম্ভে
ও অবসানে
এমন একটি
দৃশ্য রচনা
করিয়াছে, যাহা
আমাদের সমসাময়িক
কেহ আর
কখনোও দেখিবে
না। কোটি
কোটি মানুষের
ধর্মমতের প্রতিনিধিগণ
মঞ্চের উপর
উপস্হিত ছিলেন।
দৃশ্যটিকে যথাযথরূপে
ফুটাইবার প্রচেষ্টায়
আমরা রেভাঃ
জন হেনরী
ব্যারোজ কর্তৃক
প্রদত্ত কার্যবিবরণীর
প্রামাণ্য ইতিহাস
হইতে একটি
অংশ উদ্ধৃত
করিতেছিঃ
‘নির্দিষ্ট সময়ের
বহুপূর্বেই প্রসাদটি
প্রতিনিধি ও
দর্শকে ভরিয়া
উঠিল, এবং
বিভিন্ন স্হান
হইতে আগত
দেশ-বিদেশের
চার হাজার
উৎসুক শ্রোতৃবৃন্দে
‘কলম্বাস হল’
পূর্ণ হইল।
বেলা দশটার
সময় বহুজাতির
উড্ডীয়মান পতাকার
নীচে বিশাল
জনতার উল্লাসধ্বনির
মধ্যে বারোটি
ধর্মের প্রতিনিধিগণ
হাত ধরাধরি
করিয়া বারান্দা
দিয়া আগাইয়া
আসিলেন।এই সময়ে
মঞ্চটি ছবির
মতো চিত্তাকর্ষক
রূপ ধারণ
করিল। কেন্দ্রস্থলে
মার্কিন যুক্তরাষ্টের
গির্জার প্রধান
যাজক কার্ডিনাল
গিবন্ স্
উজ্জ্বল রক্তবর্ণ
সজ্জায় সজ্জিত
হইয়া উচ্চাসনে
সমাসীন; কলম্বাসের
এই স্মৃতিবৎসরে
যথাযোগ্য বলিয়া
তিনিই প্রার্থনা
দ্বারা সভার
উদ্বোধন করিবেন।
‘তাঁহার উভয়পার্শ্ব
উপবিষ্ট প্রাচ্য
প্রতিনাধিগণের নানাবর্ণের
পোশাক ঔজ্জ্বল্যে
তাঁহার পোশাকের
সমতুলই হইয়াছিল
। এইসব
ব্রাহ্ম, বৌদ্ধ
ও ইসলাম
ধর্মনিগামীদের মধ্যে
উপবিষ্ট, মনোরম
উজ্জ্বল রক্তিম
পরিচ্ছদ-পরিহিত,
তাম্রাভ মুখমণ্ডল,
শীর্ষে হরিদ্রাবর্ণের
বৃহৎ উষ্ণীষ-ভূষিত বোম্বাই-এর বাগ্মী সন্ন্যাসী
স্বামী বিবেকানন্দের
দিকেই সকলের
দৃষ্টি আকৃষ্ট
হইয়াছিল। তাঁহার
পার্শ্বে পীত
লোহিত ও
শুভ্র পরিচ্ছদ
ভূষিত ভারতের
একেশ্বরবাদী সমিতি
বা ব্রাহ্মসমাজের
বি. বি.
নাগরকর ও
সিংহলের বৌদ্ধপন্ডিত
ধর্মপাল বসিয়াছিলেন।
ধর্মপাল চার
কোটি সাত
লক্ষ পঞ্চাশ
হজার বৌদ্ধের
অভিনন্দন বহন
করিয়া আনিয়াছিলেন,
তাঁহার কৃশ
ক্ষুদ্র দেহটি
ছিল শুভ্রবাসমন্ডিত,
কুঞ্চিত কৃষ্ণ
কেশদাম ছিল
স্কন্ধ-বিলম্বিত।
‘সেখানে মুসলমান,
পারসী ও
জৈন ধর্মযাজকগণও
ছিলেন; বর্ণ
বৈচিত্র ও
গতিভঙ্গিমায় তাঁহারা
প্রত্যেকেই ছবির
মতো দেখাইতেছিলেন।
তাঁহারা সকলেই
নিজ নিজ
ধর্মের ব্যাখ্যা
ও সমর্থনে
তৎপর হইলেন।
সর্বাধিক জাঁকজমাকপূর্ণ
দেখাইতেছিল ইন্দ্রধনুর
বিচিত্রবর্নবিশিষ্ট রেশমনির্মিত
উজ্জ্বল মূল্যবান্
বেশভূষিত জাপান
ও চীনের
খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গকে।
তাঁহার বৌদ্ধধর্ম,
তাও-ধর্ম,
কংফুছের মত
ও শিন্টো-ধর্মের প্রতিনিধিত্ব
করিতেছিলেন। তাপসদের
মতো কৃষ্ণবর্ণের
বেশ পরিধান
করিয়া প্রাচ্য
প্রতিনিধিদের মধ্যে
বসিয়াছিলেন শ্রীপ্রতাপচন্দ্র মজুমদার। ভরতের
একেশ্বরবাদীদের বা
ব্রাহ্মসমাজের নেতা
মজুমদার মহাশয়
কয়েক বৎসর
পূর্বে এদেশে
আসিয়াছিলেন এবং
স্বীয় বাগ্মিতা
ও ইংরাজী
ভাষার উপর
অপূর্ব অধিকারের
দ্বারা বিপুল
সংখ্যক শ্রোতাকে
পরিতৃপ্ত করিয়াছিলেন।
‘আর একজন উল্লেখযোগ্য
ব্যাক্তি একটি
অদ্ভুত বক্রষষ্টিতে
ভর করিয়া
উপস্থিত ছিলেন।
তিনি হইলেন
জান্তের (Zante) গ্রীক ধর্মযাজক-তাঁহার শুভ্র
শ্মশ্রুরাশি আবক্ষবিস্তৃত,
মস্তকে অদ্ভুতদর্শন
শিরোভূষণ, কটিদেশ
হইতে একটি
বৃহৎ রৌপ্যনির্মিত
ক্রশ বিলম্বিত।
এশিয়া মাইনর
হইতে আগত
রক্তিমগণ্ড দীর্ঘকেশ
এক গ্রীক
‘সন্নাসী’ তাঁহার
পার্শ্বে বসিয়া
গর্ব করিয়া
বলিতেছিলেন যে,
তিনি কখনও
শিরোভূষণ ব্যবহার
করেন নাই
বা নিজ
আহার-বসস্থানের
জন্য একটি
কপর্দকও ব্যয়
করেন নাই।
‘আফ্রিকার মেথডিস্ট
চার্চের ধর্মযাজক
আর্নেট (Arnett) এবং আফ্রিকাদেশীয় এক
যুবরাজের আবলুস
কাঠের মতো
কৃষ্ণবর্ণ অথচ
উজ্জ্বল মুখমণ্ডল
মানাইয়া গিয়াছিল
সন্মিলিত মহিলাদের
সুন্দর বেশভূষায়;
সর্বপশ্চাতে ঘনকৃষ্ণ
পটভূমিরূপে ছিল
প্রোটেস্টান্ট প্রতিনিধি
ও নিমন্ত্রত
অতিথিবর্গের কৃষ্ণ
পরিচ্ছদ।’ (ক্যালিফোর্নিয়ার
ওকল্যাভূন্ডের রেভাঃ
ওয়েস্টর ধর্মোপদেশ
হইতে গৃ্হীত)
সর্বশেষ ভাষণে
স্বামী বিবেকানন্দ
এই বিশ্বধর্মসন্মেলনের সহিত অশোকের
বৌদ্ধসংগীতি কিংবা
সম্রাট্ আকবরের
ধর্মসভার তুলনা
করিয়া ইহার
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
সম্বন্ধে নিজমত
সুষ্ঠুভাবে ব্যক্ত
করিয়াছিলেন। সর্বকনিষ্ঠ
জাতির দুঃসাহসই
এইরূপ বিশাল
উচ্চাকাঙ্ক্ষা-সমন্বিত
কার্যসূচীর পরিকল্পনা
করিতে পারিয়াছিল;
নাগরিকগণের শক্তি-প্রাচুর্য এবং
উৎসাহই এই
পরিকল্পনাকে কার্যে
পরিণত করিবার
পথ আবিষ্কার
করিয়াছিল। ধর্মসভার
গঠনতন্ত্র ইহাকে
হিন্দুধর্মের সর্বধর্মসমন্ময়কারী ভাবগুলি প্রচার
করিবার উপযুক্ত
একটি অসাধারণ
ক্ষেত্ররূপে গড়িয়া
তুলিয়াছিল। পৃথিবীর
সর্বাপেক্ষা উদ্ধত
ও বর্জনশীল
প্রতিনিধেবর্গ সরল
গণতান্ত্রিক সাম্য
ও সৌজন্যের
ভিত্তিতে পরস্পরের
প্রতি শ্রদ্ধাবান্
হইয়া মিলিত
হইয়াছিলেন। তাঁহারা
আর কখনও
এরূপ বিরাট
ভাবে এইজাতীয়
অগ্নিপরীক্ষার সন্মুখীন
হইবেন বলিয়া
মনে হয়
না। বহুকাল
ধরিয়া চিকাগো
ধর্ম-মহাসভার
অধিবেশন ইতিহাসে
একক স্থান
অধিকার করিয়া
থাকিবে। এই
অবস্থায় এবং
এই পরিবেশেই
হিন্দুধর্ম পাশ্চাত্য
জগতের সন্মুখে
সর্বপ্রথম নিজমত
ব্যক্ত করিয়াছিল।