~ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ লীলামৃত ~
বৈকুন্ঠনাথ সান্ন্যাল
ভূমিকা
রসো বৈ সঃ! সচ্চিদানন্দে যে কত রস বিদ্যমান, তার ইতি করা যায় না। আকাশ ও প্রাণরস স্পন্দনে সুক্ষ, স্থুল, কঠিন, তরল বায়ব সৃষ্ট্যাদি ব্যাপার যেন ভেল্কি। যাঁরা। নিত্য ভাগীরথী সেবা করে থাকেন, হয় তাে দেখিয়াছেন-বর্যাগমে কোথায় কিছু নাই, অকস্মাৎ জাহ্নবী-জীবন কাঁকড়া পােকায় পূর্ণ; এত অধিক যে অনুমানের অতীত ! সে সময় দান-পানে দারুণ অস্বস্তি। আবার তিন চার দিন পরে কোথায় কিছু নাই ! বিশ্বসৃষ্টি-ঠিক ঐরুপ!
আবার জল-রসের আশ্চর্য মহিমা! একই মেঘ-বারিতে বিভিন্ন বীজ, কন্দ, মূল, ফল ও ফল কিরূপে শ্বেত-পীতাদি বিচিত্র বর্ণে শোভা পায়, ও ঋজুবক্রাদি আকার ধারণ করে। আর তিক্ত কষায় মিষ্টাদি স্বাদযুক্ত হয়, এবং স্নিগ্ধ , মধুর ও উগ্র গন্ধ হয়, ভাবলে জ্ঞান থাকে না। পুনঃ প্রাণিপয্যায় আকার-প্রকারভেদে অন্তরে যুগপং হিংসা-প্রীতি, কামশান্তি প্রভৃতি সম ও বিষম রসের প্রকাশ, এ রহস্যে দিশাহারা হ'তে হয়!
ঠাকুর যে কি, তা বলা-বােবার স্বপ্ন-দেখার মতাে। ভক্ত-কল্যাণ কামনায় প্রভু গাম্ভীর্য, জ্ঞান, ভক্তি, প্রেম, আবার হাস্যকৌতুকাদি কত যে রসের অবতারণা করিতেন—ভাবতে গেলে খেই হারিয়ে যায়। শিবমহিম্ন স্তবে ভক্ত পুস্পদন্ত গাহিয়াছেন-এমন তত্ত্ব নাই, প্রভাে, যাহা তুমি নও। ঠাকুর আমার ঠিক তাই। করুণাপুরঃসর কহিলেন-অনুগত, অল্পবুদ্ধি তােরা, কি করে সেই অখণ্ড সচ্চিদানন্দের ধারণা করবি? আমাতে প্রাণ ঢেলে দে, সবথি সিদ্ধি হবে।
ভক্তসঙ্গ-বিরত দেখে আমায় একদিন বলেন-বেশ! আমাকে নিয়েই থাক। যেমন নন্দরাণী গোপীদের উপর অভিমান করে বলেছিলেন-বেঁচে থাক, আমার চূড়া-বাঁশী, কতশত মিলবে দাসী। সেই অবধি প্রভুই আমার সম্বল। প্রার্থনা-সকলেরই সম্বল হউন।
প্রথম সংস্করণে বসুমতীর স্বত্বাধিকারী কল্যাণীয় সতীশচন্দ্র অনেকগুলি চিত্রসম্পদে গ্রন্থের শােভাবর্ধন করিয়াছেন, তজ্জন্য শত শত আশীর্বাদ।
মকর সংক্রান্তি, ১৩৪৩ সাল,
২০ নং বোসপাড়া লেন,
বাগবাজার, কলিকাতা।
বৈকুণ্ঠনাথ সান্ন্যাল
0 Comments