[PDF] লন্ডনে স্বামী বিবেকানন্দ (প্রথম খণ্ড) - শ্রী মহেন্দ্রনাথ দত্ত

লন্ডনে স্বামী বিবেকানন্দ  ~ প্রথম খণ্ড 

প্রথম খন্ড
- শ্রী মহেন্দ্রনাথ দত্ত -
[PDF] লন্ডনে স্বামী বিবেকানন্দ (প্রথম খণ্ড) - শ্রী মহেন্দ্রনাথ দত্ত

প্রাগবাণী 
১৮৯৬ সালে স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকা হইতে লণ্ডনে যান। স্বামী সারদানন্দ অল্পদিন পূর্বেই রেডিং নগরে স্টার্ডির বাড়ীতে পৌছিয়া ছিলেন; বর্তমান লেখক এক সপ্তাহ পরে কলিকাতা হইতে লণ্ডনে  পৌছেন। স্বামীজীর সহিত জে, জে, গুডউইন নামক একটি ইংরাজ যুবক থাকিতেন; তিনি স্বামীজীর ক্ষিপ্রলিপিকারের কাজ করিতেন। 
গুডউইন বাথ নগরের কাছে ফ্ৰোম নামক গ্রামে বাস করিতেন। তাহার বিধবা মাতা ও অবিবাহিতা দুই ভগ্নী ছিলেন। গুডউইন স্বামীজীর নিতান্ত বশম্বদ ও একান্ত সেবক ছিলেন। স্বামীজী যখন যে কথা বলিতেন বা বক্তৃতা দিতেন, গুডউইন ক্ষিপ্রলিপিতে তাহা করচা করিয়া রাখিতেন। যেসকল ইংরাজী গ্রন্থ বক্তৃতারূপে স্বামীজীর নামে প্রকাশিত হইয়াছে, সে সমস্তই গুডউইনের পরিশ্রমের ফল।
স্বামীজী কলিকাতায় প্রত্যাবর্তন করিলে গুডউইনও সঙ্গে আসেন। তিনি নানা কারণে মাদ্রাজ প্রদেশে চলিয়া গেলেন। তাঁহার ইচ্ছা ছিল, অবসর পাইলে তাহার করচা হইতে প্রচলিত লিপি করিয়া স্বামীজীর কথােপকথন ও ভাষণের অপর অংশ প্রকাশ করিবেন। সেইসকল বিষয় প্রচলিত-লিপিতে লিখিত হইলে প্রায় সাত খণ্ড গ্রন্থ হইত। নানা কারণে তাহা হয় নাই ; এবং গুডউইনও মাদ্রাজ প্রদেশে দেহত্যাগ করেন।
মাদ্রাজের আলাসিঙ্গা প্রভৃতি স্বামীজীর কয়েকজন ভক্ত গুডউইনের দ্রব্যাদি ও কাগজপত্র তাহার মাতার নিকট প্রেরণ করেন। বৃদ্ধা স্ত্রীলােক ক্ষিপ্রলিপির কিছু বুঝিতে না পারিয়া সমস্ত নষ্ট করিয়া দেন। এই ব্যাপারের কয়েক বৎসর পরে সিস্টার নিবেদিতা ইংলণ্ডে যান; আমি তাঁহাকে গুডউইনের ঠিকানা দিয়া তাহার মাতার সহিত দেখা করিতে অনুরােধ করি। ইচ্ছা ছিল, সেই সমস্ত কাগজপত্র পাওয়া গেলে কোন বিশিষ্ট আমেরিকান ক্ষিপ্রলিপি-কোবিদ দিয়া পুস্তকাকারে প্রকাশ করিব ; একজন আমেরিকান ভক্তও সমস্ত ব্যয়ভার বহন করিতে প্রস্তুত হইয়াছিলেন। নিবেদিতা ইংলণ্ড হইতে ফিরিয়া আসিয়া বলেন যে, গুডউইনের বৃদ্ধা মাতা ও ভগিনীদ্বয় অপর কোন স্থানে চলিয়া গিয়াছেন, তাহাদের কোন ঠিকানা পাওয়া যায় না। এইজন্য গুডউইন লিখিত সমস্ত কাগজপত্র নষ্ট হইয়া যায়। স্বামীজী যখন লণ্ডনে বক্তৃতা দিতেন তখন নার্সের পরিচ্ছদে একটি স্ত্রীলােক আসিয়া স্বামীজীর দিবাভাগের বক্তৃতাসমূহ ক্ষিপ্রহস্তে লিখিয়া লইতেন। তিনি আমাদের সহিত কখনও মেশেন নাই বা আমরা কেহ তাহার ঠিকানা জানিতাম না। তাহার কাছে স্বামীজীর অনেক বক্তৃতা থাকিতে পারে কিন্তু তাহা পাওয়া দুরাশার বিষয়।
এইসকল কারণে বহু লােকের অনুরােধে আমি এই গ্রন্থ প্রণয়ন করিতে প্রয়াসী হই। আমার যতদূর স্মরণ আছে এবং যাহা নির্ভুল ও সত্য বলিয়া স্মরণ আছে সেইসকল বিষয় কিঞ্চিৎ আভাস স্বরূপ এই গ্রন্থে প্রদত্ত হইল, ইহাতে আমার নিজের মত বা ভাব কিছুই সন্নিবেশিত হয় নাই। যেসকল বিষয় আমার অস্পষ্ট স্মরণ হইয়াছে তাহার উল্লেখ করিয়াছি এবং পাদটীকায় ব্যাখ্যাস্বরূপ কিঞ্চিৎ দীপিকা করিয়া দিয়াছি (দ্বিতীয় খণ্ড দ্রষ্টব্য)। গুডউইনের লিখিত কাগজের সহিত এই গ্রন্থ তুলনা করিলে হিমালয় পর্বতের সহিত বালুকণার যে সম্বন্ধ, ইহা তদ্রুপ হইবে। তবে কিছু না থাকা অপেক্ষা অল্পমাত্র আভাষ-ইঙ্গিতও ভাল, সেইজন্য যৎসামান্য এইস্থলে লিপিবদ্ধ করা হইল। স্বামীজী উপদেশকালে দেড় ঘন্টা বা দুই ঘণ্টা অনর্গল বলিয়া যাইতেন এবং অনেক গ্রন্থ উল্লেখ করিয়া তাবরাশির সম্পর্ক ও সম্মিলন দেখাইয়া যাইতেন। গুডউইনের করচা ছাড়া অপর কোন স্থানে এইসমস্ত লেখা ছিল না এবং কোন ব্যক্তির পক্ষে সমস্ত বিষয় স্মরণ রাখাও সম্ভব নয়। আমার যে কয়টি বিশিষ্ট বিষয় স্মরণ আছে, আমি সেই কয়টি মাত্র দিতেছি।
এই গ্রন্থপাঠে যদি কাহারও কিছু উপকার হয় এবং স্বামীজীর বিষয় কেহ বিশেষভাবে বুঝিতে পারেন, তাহা হইলে আমি কৃতার্থ হইব এবং আমার শ্রম সফল জ্ঞান করিব। ঘটনা-সংক্ষেপ এবং ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য আমি পাঠকগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি। এইরূপ সামান্য গ্রন্থপাঠে মহান স্বামীজীর বিষয় বিশেষ কিছু বােঝা যায় না, তবে আকার ইঙ্গিতে সেই মহান্ ধীশক্তিসম্পন্ন পুরুষের কিঞ্চিৎ আভাষ দিলাম।
এই গ্রন্থ প্রণয়নকালে শ্রীযুক্ত বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়, শ্ৰীযুক্ত প্যারীমােহন মুখোপাধ্যায়, শ্ৰীযুক্ত আশুতােষ গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রনাথ সেন, শ্ৰীযুক্ত বিধুভূষণ সেন, স্বর্গীয় বলাইচাঁদ মিত্র লিপিকাৰ্য্য ও অন্যান্য বিষয়ে সাহায্য করিয়াছিলেন। ব্রহ্মচারী প্রাণেশকুমার এবং শ্ৰীযুক্ত চিরঞ্জীব বলিয়ার অন্যান্য বিষয়ে বিশেষ উপকার করিয়াছিলেন। অপর কয়েকজন উৎসাহী যুবক একান্ত পরিশ্রম করিয়া আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করিয়াছেন, সেইজন্য আমি প্রত্যেকের নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিতেছি। তাঁহাদের আন্তরিক সাহায্য না পাইলে আমি কখনই এই গ্রন্থ রচনা করিতে পারিতাম না।

৩, গৌরমােহন মুখার্জি ষ্ট্রীট,                                              শ্রীমহেন্দ্রনাথ দত্ত
কলিকাতা। 
রাসপূর্ণিমা, ১৩৩৮

Read PDF Online
প্রথম খন্ড
==================================================

Post a Comment

0 Comments