[PDF] স্বামী বিবেকানন্দ ও বাংলায় উনবিংশ শতাব্দী - শ্রী গিরিজাশঙ্কর রায়চৌধুরী

~ স্বামী বিবেকানন্দ ও বাংলায় উনবিংশ শতাব্দী ~

শ্রী গিরিজাশঙ্কর রায়চৌধুরী 

[PDF] স্বামী বিবেকানন্দ ও বাংলায় উনবিংশ শতাব্দী - শ্রী গিরিজাশঙ্কর রায়চৌধুরী

ভূমিকা 

এই পুস্তকের দ্বাদশটি পরিচ্ছেদে ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাঙ্গলাদেশে ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের যে আন্দোলন হইয়াছিল, তাহার একটি ধারাবাহিক ইতিহাস আলােচনা করা হইয়াছে। সাহিত্য, দর্শন, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি সমাজের বিভিন্ন বিভাগের সমস্যাগুলি, গ্রন্থের কলেবর বৃদ্ধির ভয়ে, এই আলোচনার অন্তর্ভুক্ত করিতে পারি নাই। বিশেষতঃ সমাজ-জীবনের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে পরপর অঙ্গাঙ্গী যােগ থাকা সত্ত্বেও, ঐ সকল বিভাগের পৃথক ও স্বাধীন আলােচনা বিজ্ঞান-সম্মত ও সম্ভব মনে করিয়া ক্রমে তাহার আলোচনা করিব—আশা করিতেছি। ব্যক্তি লইয়াই সমাজ। তথাপি ব্যক্তিত্বকে অতিক্রম করিয়াও সমাজের একটা পৃথক অস্তিত্ব আছে, জীবন আছে, গতি আছে। গত শতাব্দীর আলােচনায় রামমােহন হইতে বিবেকানন্দ পর্যন্ত মহাপুরুষদিগের প্রখর ব্যক্তিত্বের উপর, এবং তদতিরিক্ত সমাজের পৃথক, প্রাণ-শক্তি ও গতির উপর সমানভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করিবার চেষ্টা করিয়াছি।
বাঙ্গলাদেশের ঊনবিংশ শতাব্দীই মুখ্যতঃ এই বক্তৃতা গুলির আলোচ্য বিষয়। এই শতাব্দীতে রামমােহন হইতে আরম্ভ করিয়া বিবেকানন্দ পর্যন্ত ধর্ম ও সমাজ সংস্কার সম্পর্কে চিন্তার যে অবিচ্ছিন্ন একটি ধারা রহিয়াছে, আমি তাহাকেই অনুসরণ করিয়াছি। এই শতাব্দী একটি সভ্য জাতির সভ্যতার সংস্কারে প্রবৃত্ত হইয়াছিল। এই দিক দিয়া দেখিতে গেলে, গ্রন্থের আলােচ্য সংস্কারের ধারা কেবল ঊনবিংশ শতাব্দীতেই আরম্ভ কিংবা শেষ হয় নাই। ব্যক্তি বা জাতির মধ্যে কোন নতুন চিন্তা বা ভাবরাশি সন তারিখ দেখিয়া আরম্ভ হয় না। ইতিহাসের পথে অবিচ্ছিন্ন এক বা একত্রে বহু ধারা অব্যাহত রাখিয়া মাঝে মাঝে নতুন তরঙ্গ তােলে মাত্র। এই প্রসঙ্গে গ্রন্থের নবম পরিচ্ছেদে, ষোড়শ হইতে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বাঙ্গালী-সভ্যতার এক অতি সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হইয়াছে। অন্য দিক দিয়া যদি দেখা যায়, তবে অষ্টাদশ শতাব্দী শেষ হইবার অন্তত দশ বৎসর পূর্বেই রামমােহনের চিন্তা নবােদিত সূর্যের মত রক্তিম হইয়া দেখা দিয়াছে—এবং উনবিংশ শতাব্দী শেষ হইয়া গেলেও বিবেকানন্দের প্রতিভা নির্বাপিত হয় নাই—দীপ্তি পাইতেছে।
একদিকে স্বদেশীয় রক্ষণশীল পণ্ডিতগণ অতীতের দিকে মুখ ফিরাইয়া দাঁড়াইয়া মরিতে ইচ্ছুক; অন্যদিকে আধুনিক পাশ্চাত্য ভাবাপন্ন শিক্ষিত ব্যক্তিগণ ঘর ছাড়িয়া একেবারে বাহিরে যাইবার জন্য উন্মনা। সুতরাং ঊনবিংশ শতাব্দীর চিন্তার ধারা, ঐতিহাসিকের নিকট বিশেষ অভিনিবেশ সহকারে অনুধাবন করিবার বিষয়। শতাব্দীর মধ্যভাগে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ—অক্ষয় কুমারগঞ্জ নারায়ণ — বিদ্যাসাগর কেশবচন্দ্র এবং শেষ ভাগে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, পণ্ডিত বিজয় কৃষ্ণ প্রভৃতি শতাব্দীর ইতিহাসে চিরপূজ্য স্মরণীয় ব্যক্তিগণ, কে কি ভাবে কোন দিকে চিন্তার ধারাকে চালিত করিয়াছেন যথাক্রমে তাহা আলােচনা করা হইয়াছে।
এই শতাব্দীকে যেরুপভাবে ভাগ করা হইয়াছে তাহা আমার নিজের ধারণার বশবর্তী হইয়াই আমি করিয়াছি। পুরাণ এবং তন্ত্রের যুগকে আমি বিস্তৃতভাবে আলােচনা করিয়াছি। কেননা ঊনবিংশ শতাব্দী হইতে এখনাে পর্যন্ত বাঙ্গলাদেশে পুরাণ ও তন্ত্রের যুগ আপামর সাধারণের মধ্যে রাজত্ব করিতেছে। 
- এই বক্তৃতাগুলি ১১০ বৎসর পরে ছাপা হইল। ছাপাইবার পূর্বে কোন কোন প্রানে সংশােধন ও পরিবর্তন করিয়াছি। শতাব্দীর আলােচনায় আমার যে মত তাহার বিশেষ পরিবর্তন হয় নাই। গ্রন্থে অনেক এটি রহিয়া গেল। সমগ্র ভারতবর্ষে হিন্দু-সভ্যতা এক অতি জটিল ব্যাপার। প্রত্যেক প্রদেশের হিন্দু সভ্যতার একটা স্বতন্ত্র বা বৈশিষ্ট্য আছে। গত শতাব্দীর আলোচনায় বাঙ্গালী সভ্যতাকে ভারতের অন্যান্য প্রদেশের হিন্দু-সভ্যতার সহিত তুলনামূলক বিচার করিতে পারি নাই। ভারতের হিন্দু ও মুসলমান সভ্যতা একে অন্যকে কিরুপভাবে প্রভাবান্বিত করিয়াছে তাহারও বিশ্লেষণ করি নাই। অথচ, বাঙ্গালীসভ্যতার সহিত ইহাদের একটা ঘনিষ্ট যােগসূত্র আছে। কেননা, সমগ্র হিন্দু:সভ্যতা একটা অখণ্ড বস্তু—একটি জীবন্ত প্রাণিবিশেষ। প্রদেশ ভেদে উন্নতি বা অবনতির পথে স্তরভেদে হিন্দু-সভ্যতা বহুমখী ধারায় প্রবাহিত হইয়া চলিয়াছে, —আজও চলিতেছে। বাঙ্গলাদেশের যে ধারা আমি তাহারই আলােচনা করিয়াছি মাত্র।
১৯১৮ ও ১৯১৯ খৃষ্টাব্দে যথাক্রমে দশটি বক্তৃতা বিবেকানন্দ সােসাইটির আয়োজনে, কলিকাতা থিওজোফিক্যাল সোসাইটির গৃহে আমি পাঠ করি। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে নবম ও একাদশ এই দুইটি বক্তৃতা লিখিয়াছি ও ‘বঙ্গবাণী' মাসিক পত্রিকায় ছাপা হইয়াছে। 
 এই বক্তৃতাগলি ছাপা হইবার সময় প্রথম দিকে আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক শ্রীমান সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার এবং শেষের দিকে আশুতােষ কলেজে'র অধ্যাপক শ্ৰীযুত কুমদা চন্দ্র রায়চৌধুরী মহাশয় ইহার প্রুফ সংশােধন করিয়া আমার কৃতজ্ঞতা ভাজন হইয়াছেন। বিবেকানন্দ সোসাইটির যে সকল সভায় আমি এই বক্তৃতাগুলি পাঠ করিয়াছি, তাহাতে শ্রদ্ধের শ্রীযুক্ত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, শ্রীযুক্ত চারুচন্দ্র বসু মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত শ্রী প্রমথনাথ তর্কভূষণ, মহামহোপাধ্যায় যাদবেশ্বর তর্করত্ন, “মহামহোপাধ্যায় সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণ, পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় সুরেশচন্দ্র সমাজপতি সভাপতির আসন গ্রহণ করিয়া আমাকে সম্মানিত করিয়াছিলেন। তাহাদের উদ্দেশে আমি অন্তরের কৃতজ্ঞতা জানাইতেছি। 
ইতি
গ্রন্থকার
Read PDF Online

Post a Comment

0 Comments