ষোড়শ খণ্ড-চতুর্থ ভাগ -শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত-শ্রীম কথিত
চতুর্থ ভাগ 

ষোড়শ খণ্ড
দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে মাস্টার, রাখাল, লাটু, বলরাম, অধর, শিবপুরভক্তগণ প্রভৃতি সঙ্গে

ষোড়শ খণ্ড-চতুর্থ ভাগ -শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত

===========

প্রথম পরিচ্ছেদ

১৮৮৪, ৩রা অগস্ট
শিবপুর ভক্তসঙ্গে যোগতত্ত্ব কথা — কুণ্ডলিনী ও শট্‌চক্রভেদ

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে মধ্যাহ্ন সেবার পর ভক্তসঙ্গে বসিয়া আছেন। বেলা দুইটা হইবে।

শিবপুর হইতে বাউলের দল ও ভবানীপুর হইতে ভক্তেরা আসিয়াছেন। শ্রীযুক্ত রাখাল, লাটু, হরিশ, আজকাল সর্বদাই থাকেন। ঘরে বলরাম, মাস্টারও আছেন।

আজ রবিবার, ৩রা অগস্ট, ১৮৮৪, ২০শে শ্রাবণ। শুক্লা দ্বাদশী, ঝুলনযাত্রার দ্বিতীয় দিন। গতকল্য ঠাকুর সুরেন্দ্রের বাড়িতে গিয়াছিলেন, — যেখানে শশধর প্রভৃতি ভক্তেরা তাঁহাকে দর্শন করিয়াছিলেন।

ঠাকুর শিবপুরের ভক্তদের সম্বোধন করিয়া কথা কহিতেছেন —

শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি) — কামিনী-কাঞ্চনে মন থাকলে যোগ হয় না। সাধারণ জীবের মন লিঙ্গ, গুহ্য ও নাভিতে। সাধ্য-সাধনার পর কুলকুন্ডলিনী জাগ্রতা হন। ইড়া, পিঙ্গলা আর সুষুম্না নাড়ী; — সুষুম্নার মধ্যে ছটি পদ্ম আছে। সর্বনিচে মূলাধার, তারপর স্বাধিষ্ঠান, মণিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ ও আজ্ঞা। এইগুলিকে ষট্‌চক্র বলে।

“কুলকুণ্ডলিনী জাগ্রতা হলে মূলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মণিপুর — এই সব পদ্ম ক্রমে পার হয়ে হৃদয়মধ্যে অনাহত পদ্ম — সেইখানে এসে অবস্থান করে। তখন লিঙ্গ, গুহ্য, নাভি থেকে মন সরে গিয়ে চৈতন্য হয় আর জ্যোতিঃদর্শন হয়। সাধক অবাক হয়ে জ্যোতিঃ দেখে আর বলে, ‘একি!’ ‘একি!’

“ষটচক্র ভেদ হলে কুণ্ডলিনী সহস্রার পদ্মে গিয়ে মিলিত হন। কুণ্ডলিনী সেখানে গেলে সমাধি হয়।

“বেদমতে এ-সব চক্রকে — ‘ভূমি’ বলে। সপ্তভূমি। হৃদয় — চতুর্থভূমি। অনাহত পদ্ম, দ্বাদশ দল।

“বিশুদ্ধ চক্র পঞ্চমভূমি। এখানে মন উঠলে কেবল ঈশ্বরকথা বলতে আর শুনতে প্রাণ ব্যাকুল হয়। এ-চক্রের স্থান কণ্ঠ। ষোড়শ দল পদ্ম। যার এই চক্রে মন এসেছে, তার সামনে বিষয়কথা — কামিনী-কাঞ্চনের কথা — হলে ভারী কষ্ট হয়! ওরূপ কথা শুনলে সে সেখান থেকে উঠে যায়।

“তারপর ষষ্ঠভূমি। আজ্ঞা চক্র — দ্বিদল পদ্ম। এখানে কুলকুণ্ডলিনী ঈশ্বরের রূপ দর্শন হয়। কিন্তু একটু আড়াল থাকে — যেমন লন্ঠনের ভিতর আলো, মনে হয় আলো ছুঁলাম, কিন্তু কাচ ব্যবধান আছে বলে ছোঁয়া যায় না।

“তারপর সপ্তভূমি। সহস্রার পদ্ম। সেখানে কুণ্ডলিনী গেলে সমাধি হয়। সহস্রারে সচ্চিদানন্দ শিব আছেন — তিনি শক্তির সহিত মিলিত হন। শিব-শক্তির মিলন!

“সহস্রারে মন এসে সমাধিস্থ হয়ে আর বাহ্য থাকে না। সে আর দেহরক্ষা করতে পারে না। মুখে দুধ দিলে গড়িয়ে যায়। এ অবস্থায় থাকলে একুশদিনে মৃত্যু হয়। কালাপানিতে গেলে জাহাজ আর ফেরে না।

“ঈশ্বরকোটি — অবতারাদি — এই সমাধি অবস্থা থেকে নামতে পারে। তারা ভক্তি-ভক্ত নিয়ে থাকে, তাই নামতে পারে। তিনি তাদের ভিতর ‘বিদ্যার আমি’ — ‘ভক্তের আমি’ — লোকশিক্ষার জন্য — রেখে দেন। তাদের অবস্থা — যেমন ষষ্ঠভূমি আর সপ্তভূমির মাঝখানে বাচখেলা।

“সমাধির পর ‘বিদ্যার আমি’ কেউ কেউ ইচ্ছা করে রেখে দেন। সে আমির আঁট নাই। — রেখা মাত্র।

“হনুমান সাকার-নিরাকার সাক্ষাৎকারের পর ‘দাস আমি’ রেখেছিলেন। নারদাদি — সনক, সনন্দ, সনাতন, সনৎকুমার, এঁরাও ব্রহ্মজ্ঞানের পর ‘দাস আমি’ ‘ভক্তের আমি’ রেখেছিলেন। এঁরা, জাহাজের মতো, নিজেও পারে যান, আবার অনেক লোককে পার করে নিয়ে যান।”

ঠাকুর এইরূপে কি নিজের অবস্থা বর্ণনা করিতেছেন? বলিতেছেন —

[পরমহংস — নিরাকারবাদী ও সাকারবাদী। ঠাকুরের ব্রহ্মজ্ঞানের পর ভক্তি — নিত্যলীলাযোগ ]

“পরমহংস — নিরাকারবাদী আবার সাকারবাদী। নিরাকারবাদী যেমন ত্রৈলঙ্গ স্বামী। এঁরা আপ্তসারা — নিজের হলেই হল।

“ব্রহ্মজ্ঞানের পরও যারা সাকারবাদী তারা লোকশিক্ষার জন্য ভক্তি নিয়ে থাকে। যেমন কুম্ভ পরিপূর্ণ হল, অন্য পাত্রে জল ঢালাঢালি করছে।

“এরা যে-সব সাধনা করে ভগবানকে লাভ করেছে, সেই সকল কথা লোকশিক্ষার জন্য বলে — তাদের হিতের জন্য। জলপানের জন্য অনেক কষ্টে কূপ খনন করলে — ঝুড়ি-কোদাল লয়ে। কূপ হয়ে গেল, কেউ কেউ কোদাল, আর আর যন্ত্র কূপের ভিতরেই ফেলে দেয় — আর কি দরকার! কিন্তু কেউ কেউ কাঁধে ফেলে রাখে, পরের উপকার হবে বলে।

“কেউ আম লুকিয়ে খেয়ে মুখ পুঁছে! কেউ অন্য লোককে দিয়ে খায় — লোকশিক্ষার জন্য আর তাঁকে আস্বাদন করবার জন্য। ‘চিনি খেতে ভালবাসি’।

“গোপীদেরও ব্রহ্মজ্ঞান ছিল। কিন্তু তারা ব্রহ্মজ্ঞান চাইত না। তারা কেউ বাৎসল্যভাবে, কেউ সখ্যভাবে, কেউ মধুরভাবে, কেউ দাসীভাবে ঈশ্বরকে সম্ভোগ করতে চাইত।”

[কীর্তনানন্দে — শ্রীগৌরাঙ্গের নাম ও মায়ের নাম ]

শিবপুরের ভক্তেরা গোপীযন্ত্র লইয়া গান করিতেছেন। প্রথম গানে বলিতেছেন, “আমরা পাপী, আমাদের উদ্ধার কর।”

শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি) — ভয় দেখিয়ে — ভয় পেয়ে — ভজনা, প্রবর্তকের ভাব। তাঁকে লাভ করার গান গাও। আনন্দের গান। (রাখালের প্রতি) নবীন নিয়োগীর বাড়িতে সেদিন কেমন গান করছিল —

হরিনাম মদিরায় মত্ত হও —

“কেবল অশান্তির কথা ভাল নয়। তাঁকে লয়ে আনন্দ — তাঁকে লয়ে মাতোয়ারা হওয়া।”

শিবপুরের ভক্ত — আজ্ঞা, আপনার গান একটি হবে না?

শ্রীরামকৃষ্ণ — আমি কি গাইব? আচ্ছা, যখন হবে গাইব।

কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর গান গাহিতেছেন। গাইবার সময় ঊর্ধ্বদৃষ্টি।

গান – কৌপিন দাও কাঙালবেশে ব্রজে যাই হে ভারতী।

গান – গৌর প্রেমের ঢেউ লেগেছে গায়।

গান – দেখসে আয় গৌরবরণ রূপখানি (গো সজানী)।
আলতোলা দুধের ছানা মাখা গোরার গায়,
(দেখে ভাবের উদয় হয়)।
কারিগর ভাঙ্গড়, মিস্ত্রী বৃষভানুনন্দিনী

গান – ডুব্‌ ডুব্‌ ডুব্‌ রূপসাগরে আমার মন।

গৌরাঙ্গের নামের পর ঠাকুর মার নাম করিতেছেন:

(১) শ্যামা ধন কি সবাই পায়। অবোধ মন বোঝে না একি দায়।।

(২) মজলো আমার মনভ্রমরা শ্যামাপদ নীলকমলে।

(৩) শ্যামা মা কি কল করেছে, কালী মা কি কল করেছে,
চৌদ্দ পোয়া কলের ভিতরি, কত রঙ্গ দেখাতেছে।
আপনি থাকি কলের ভিতরি, কল ঘুরায় ধরে কলডুরি;
কল বলে আপনি ঘুরি, জানে না কে ঘুরাতেছে।।
যে কল জেনেছে তারে, কল হতে হবে না তারে,
কোনো কলের ভক্তি ডোরে আপনি শ্যামা বাঁধা আছে।

============

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

১৮৮৪, ৩রা অগস্ট

ঠাকুরের সমাধি ও জগন্মাতার সহিত কথা — প্রেমতত্ত্ব

এই গান গাহিতে গাহিতে ঠাকুর সমাধিস্থ হইলেন। ভক্তেরা সকলে নিস্তব্ধ হইয়া দর্শন করিতেছেন। কিয়ৎক্ষণ পরে কিঞ্চিৎ প্রকৃতিস্থ হইয়া মার সঙ্গে কথা কহিতেছেন।

“মা, উপর থেকে (সহস্রার থেকে?) এইখানে নেমে এস! — কি জ্বালাও! — চুপ করে বস!

“মা, যার যা (সংস্কার) আছে, তাই তো হবে! — আমি আর এদের কি বলব! বিবেক-বৈরাগ্য না হলে কিছু হয় না।

“বৈরাগ্য অনেকপ্রকার। একরকম আছে মর্কটবৈরাগ্য! — সংসারের জ্বালায় জ্বলে বৈরাগ্য — সে বৈরাগ্য বেশিদিন থাকে না। আর ঠিক ঠিক বৈরাগ্য — সব আছে, কিছুর অভাব নাই, অথচ সব মিথ্যাবোধ।

“বৈরাগ্য একেবারে হয় না। সময় না হলে হয় না। তবে একটি কথা আছে — শুনে রাখা ভাল। সময় যখন হবে তখন মনে হবে — ও! সেই শুনেছিলাম!

“আর একটি কথা। এ-সব কথা শুনতে শুনতে বিষয়বাসনা একটু একটু করে কমে। মদের নেশা কমাবার জন্য একটু একটু চালুনির জল খেতে হয়। তাহলে ক্রমে ক্রমে নেশা ছুটতে থাকে।

“জ্ঞানলাভের অধিকারী বড়ই কম। গীতায় বলেছে — হাজার হাজার লোকের ভিতর একজন তাঁকে জানতে ইচ্ছা করে। আবার যারা জানতে ইচ্ছা করে, সেইরূপ হাজার হাজার লোকের ভিতর একজন জানতে পারে।”

তান্ত্রিকভক্ত — ‘মনুষ্যাণাং সহস্রেষু কশ্চিৎ যততি সিদ্ধয়ে’ ইত্যাদি।

শ্রীরামকৃষ্ণ — সংসারে আসক্তি যত কমবে, ততই জ্ঞান বাড়বে। কামিনী-কাঞ্চনে আসক্তি।

[সাধুসঙ্গ, শ্রদ্ধা, নিষ্ঠা, ভক্তি, ভাব, মহাভাব, প্রেম ]

“প্রেম সকলের হয় না। গৌরাঙ্গের হয়েছিল। জীবের ভাব হতে পারে — এই পর্যন্ত। ঈশ্বরকোটির — যেমন অবতার আদির — প্রেম হয়। প্রেম জলে জগৎ মিথ্যা তো বোধ হইবেই, আবার শরীর যে এত ভালবাসার জিনিস, তা ভুল হয়ে যায়!

“পার্শী বইয়ে (হাফেজে) আছে, চামড়ার ভিতর মাংস, মাংসের ভিতর হাড়, হাড়ের ভিতর মজ্জা, তারপরে আরও কত কি! সকলের ভিতর প্রেম।

“প্রেমে কোমল, নরম হয়ে যায়। প্রেমে, কৃষ্ণ ত্রিভঙ্গ হয়েছেন।

“প্রেম হলে সচ্চিদানন্দকে বাঁধবার দড়ি পাওয়া যায়। যাই দেখতে চাইবে দড়ি ধরে টানলেই হয়। যখন ডাকবে তখন পাবে।

“ভক্তি পাকলে ভাব। ভাব হলে সচ্চিদানন্দকে ভেবে অবাক্‌ হয় যায়। জীবের এই পর্যন্ত। আবার ভাব পাকলে মহাভাব, — প্রেম। যেমন কাঁচা আম আর পাকা আম।

“শুদ্ধাভক্তিই সার, আর সব মিথ্যা!

“নারদ স্তব করাতে বললেন, তুমি বর লও। নারদ চাইলেন, শুদ্ধাভক্তি। আর বললেন — রাম, যেন তোমার জগৎমোহিনী মায়ার মুগ্ধ না হই! রাম বললেন, ও তো হল, আর কিছু বর লও।

“নারদ বললেন, আর কিছু চাই না, কেবল ভক্তি!

“এই ভক্তি কিরূপে হয়? প্রথমে সাধুসঙ্গ করতে হয়। সাধুসঙ্গ করলে ঈশ্বরীয় বিষয়ে শ্রদ্ধা হয়। শ্রদ্ধার পর নিষ্ঠা, ঈশ্বরকথা বই আর কিছু শুনতে ইচ্ছা করে না; তাঁরই কাজ করতে ইচ্ছা করে।

“নিষ্ঠার পর ভক্তি। তারপর ভাব, — মহাভাব, প্রেম — বস্তুলাভ।

“মহাভাব, প্রেম, অবতার আদির হয়। সংসারী জীবের জ্ঞান, ভক্তের জ্ঞান, আর অবতারের জ্ঞান সমান নয়। সংসারী জীবের জ্ঞান যেন প্রদীপের আলো, — শুধু ঘরের ভিতরটি দেখা যায়। সে জ্ঞানে খাওয়া-দাওয়া, ঘর করা, শরীররক্ষা, সন্তানপালন — এই সব হয়।

“ভক্তের জ্ঞান, যেন চাঁদের আলো। ভিতর বার দেখা যায়, কিন্তু অনেক দূরের জিনিস, কি খুব ছোট জিনিস, দেখা যায় না। অবতার আদির জ্ঞান যেন সূর্যের আলো। ভিতর বার, ছোট বড় — তাঁরা সব দেখতে পান।

“তবে সংসারী জীবের মন ঘোলা জল হয়ে আছে বটে, কিন্তু নির্মলি ফেললে আবার পরিষ্কার হতে পারে। বিবেক-বৈরাগ্য নির্মলি।”

এইবার ঠাকুর শিবপুরের ভক্তদের সহিত কথা কহিতেছেন।

[ঈশ্বরকথা শ্রবণের প্রয়োজন। “সময়-সাপেক্ষ”। ঠাকুরের সহজাবস্থা ]

শ্রীরামকৃষ্ণ — আপনাদের কিছু জিজ্ঞাসা থাকে বলো।

ক্ত — আজ্ঞা, সব তো শুনলাম।

শ্রীরামকৃষ্ণ — শুনে রাখা ভাল, কিন্তু সময় না হলে হয় না।

“যখন খুব জ্বর, তখন কুনাইন দিলে কি হবে? ফিবার মিকশ্চার দিয়ে বাহ্যে-টাহ্যে হয়ে একটু কম পড়লে তখন কুনাইন দিতে হয়। আবার কারু কারু অমনি সেরে যায়, কুনাইন না দিলেও হয়।

“ছেলে ঘুমবার সময় বলেছিল, ‘মা আমার যখন হাগা পাবে তখন তুলো।’ মা বললে, ‘বাবা, আমায় তুলতে হবে না, হাগায় তোমায় তুলবে।’

“কেউ কেউ এখানে আসে দেখি, কোন ভক্তসঙ্গে নৌকা করে এসেছে। ঈশ্বরীয় কথা তাদের ভাল লাগে না। কেবল বন্ধুর গা টিপছে, ‘কখন যাবে, কখন যাবে?’ যখন বন্ধু কোনরকমর উঠলো না, তখন বলে, ‘তবে ততক্ষণ আমি নৌকায় গিয়ে বসে থাকি।’

“যাদের প্রথম মানুষ জন্ম, তাদের ভোগের দরকার। কতকগুলো কাজ করা না থাকলে চৈতন্য হয় না।”

ঠাকুর ঝাউতলায় যাইবেন। গোল বারান্দায় মাস্টারকে বলিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — আচ্ছা, আমার কিরকম অবস্থা।?

মাস্টার (সহাস্যে) — আজ্ঞা, আপনার উপরে সহজাবস্থা — ভিতর গভীর। — আপনার অবস্থা বোঝা ভারী কঠিন!

শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — হাঁ; যেমন floor করা মেঝে, লোকে উপরটাই দেখে, মেঝের নিচে কত কি আছে, জানে না!

চাঁদনির ঘাটে বলরাম প্রভৃতি কয়েকটি ভক্ত কলিকাতা যাইবার জন্য নৌকা আরোহন করিতেছেন। বেলা চারিটা বাজিয়াছে। ভাটা পড়িয়াছে, তাহাতে দক্ষিণে হাওয়া। গঙ্গাবক্ষ তরঙ্গমালায় বিভূষিত হইয়াছে।

বলরামের নৌকা বাগবাজার অভিমুখে চলিয়া যাইতেছে, মাস্টার অনেকক্ষণ ধরিয়া দেখিতেছেন।

নৌকা অদৃশ্য হইলে তিনি আবার ঠাকুরের কাছে আসিলেন।

ঠাকুর পশ্চিম বারান্দা হইতে নামিতেছেন — ঝাউতলায় যাইবেন। উত্তর-পশ্চিমে সুন্দর মেঘ হইয়াছে। ঠাকুর বলিতেছেন, বৃষ্টি হবে কি, ছাতাটা আনো দেখি। মাস্টার ছাতা আনিলেন। লাটুও সঙ্গে আছেন।

ঠাকুর পঞ্চবটীতে আসিয়াছেন। লাটুকে বলিতেছেন — ‘তুই রোগা হয়ে যাচ্ছিস কেন?’

লাটু — কিছু খেতে পারি না!

শ্রীরামকৃষ্ণ — কেবল কি ওই — সময় খারাপ পড়েছে — আর বেশি ধ্যান করিস বুঝি?

ঠাকুর মাস্টারের সহিত কথা কহিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) — তোমার ওইটে ভার রইল। বাবুরামকে বলবে, রাখাল গেলে দুই-একদিন মাঝে মাঝে এসে থাকবে। তা না হলে আমার মন ভারী খারাপ হবে।

মাস্টার — যে আজ্ঞা, আমি বলব।

সরল হইলে ঈশ্বরকে পাওয়া যায়। ঠাকুর জিজ্ঞাসা করিতেছেন, বাবুরাম সরল কি না!

[ঝাউতলা ও পঞ্চবটীতে শ্রীরামকৃষ্ণের সুন্দর রূপ দর্শন ]

ঠাকুর ঝাউতলা হইতে দক্ষিণাস্য হইয়া আসিতেছেন। মাস্টার ও লাটু পঞ্চবটীতলায় দাঁড়াইয়া উত্তরাস্য হইয়া দেখিতেছেন।

ঠাকুরের পশ্চাতে নবীন মেঘ গগনমণ্ডল সুশোভিত করিয়া জাহ্নবী-জলে প্রতিবিম্বিত হইয়াছে — তাহাতে গঙ্গাজলে কৃষ্ণবর্ণ দেখাইতেছে।

ঠাকুর আসিতেছেন — যেন সাক্ষাৎ ভগবান দেহধারণ করিয়া মর্ত্যলোকে ভক্তের জন্য কলুষবিনাশিনী হরিপাদাম্বুজসম্ভূতা সুরধুনীর তীরে বিচরণ করিতেছেন। সাক্ষাৎ তিনি উপস্থিত। — তাই কি বৃক্ষ, লতা, গুল্ম, উদ্যানপথ, দেবালয়, ঠাকুর-প্রতিমা, সেবকগণ, দৌবারিকগণ, প্রত্যেক ধূলিকণা, এত মধুর হইতেছে!
=========

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

১৮৮৪, ৩রা অগস্ট

নবাই চৈতন্য, নরেন্দ্র, বাবুরাম, লাটু, মণি, রাখাল, নিরঞ্জন, অধর

ঠাকুর নিজের ঘরে আসিয়া বসিয়াছেন। বলরাম আম্র আনিয়াছিলেন! ঠাকুর শ্রীযুক্ত রাম চাটুজ্যেকে বলিতেছেন — তোমার ছেলের জন্য আমগুলি নিয়ে যেও। ঘরে শ্রীযুক্ত নবাই চৈতন্য বসিয়াছেন। তিনি লাল কাপড় পরিয়া আসিয়াছেন।

উত্তরের লম্বা বারান্দায় ঠাকুর হাজরার সহিত কথা কহিতেছেন। ব্রহ্মচারী হরিতাল ভস্ম ঠাকুরের জন্য দিয়াছেন। — সেই কথা হইতেছে।

শ্রীরামকৃষ্ণ — ব্রহ্মচারীর ঔষধ আমার বেশ খাটে — লোকটা ঠিক।

হাজরা — কিন্তু বেচারী সংসারে পড়েছে — কি করে! কোন্নগর থেকে নবাই চৈতন্য এসেছেন। কিন্তু সংসারী লাল কাপড় পরা!

শ্রীরামকৃষ্ণ — কি বলব! আর আমি দেখি ঈশ্বর নিজেই এই-সব মানুষরূপ ধারণ করে রয়েছেন। তখন কারুকে কিছু বলতে পারি না।

ঠাকুর আবার ঘরের মধ্যে আসিয়াছেন। হাজরার সহিত নরেন্দ্রের কথা কহিতেছেন।

হাজরা — “নরেন্দ্র আবার মোকদ্দমায় পড়েছে।”

শ্রীরামকৃষ্ণ — শক্তি মানে না। দেহধারণ করলে শক্তি মানতে হয়।

হাজরা — বলে, আমি মানলে সকলেই মানবে, — তা কেমন করে মানি।

“অত দূর ভাল নয়। এখন শক্তিরই এলাকায় এসেছে। জজসাহেব পর্যন্ত যখন সাক্ষী দেয়, তাঁকে সাক্ষীর বাক্সে নেমে এসে দাঁড়াতে হয়।”

ঠাকুর মাস্টারকে বলিতেছেন — তোমার সঙ্গে নরেন্দ্রের দেখা হয় নাই?

মাস্টার — আজ্ঞা, আজকাল হয় নাই।

শ্রীরামকৃষ্ণ — একবার দেখা করো না — আর গাড়ি করে আনবে।

(হাজরার প্রতি) — “আচ্ছা, এখানকার সঙ্গে কি তার সম্বন্ধ?”

হাজরা — আপনার সাহায্য পাবে।

শ্রীরামকৃষ্ণ — ভবনাথ? সংস্কার না থাকলে এখানে এত আসে?

“আচ্ছা, হরিশ, লাটু — কেবল ধ্যান করে; — উগুনো কি?”

হাজরা — হাঁ, কেবল ধ্যান করা কি? আপনাকে সেবা করে, সে এক।

শ্রীরামকৃষ্ণ — হবে! — ওরা উঠে গিয়ে আবার কেউ আসবে।

[মণির প্রতি নানা উপদেশ। শ্রীরামকৃষ্ণের সহজাবস্থা ]

হাজরা ঘর হইতে চলিয়া গেলেন। এখনও সন্ধ্যার দেরি আছে। ঠাকুর ঘরে বসিয়া একান্তে মণির সহিত কথা কহিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (মণির প্রতি) — আচ্ছা, আমি যা ভাবাবস্থায় বলি, তাতে লোকের আকর্ষণ হয়?

মণি — আজ্ঞা, খুব হয়।

শ্রীরামকৃষ্ণ — লোকে কি ভাবে? ভাবাবস্থায় দেখলে কিছু বোধ হয়?

মণি — বোধ হয়, একধারে জ্ঞান, প্রেম, বৈরাগ্য — তার উপর সহজাবস্থা। ভিতর দিয়ে কত জাহাজ চলে গেছে, তবু সহজ! ও অবস্থা অনেকে বুঝতে পারে না — দু-চারজন কিন্তু ওইতেই আকৃষ্ট হয়।

শ্রীরামকৃষ্ণ — ঘোষপাড়ার মতে ঈশ্বরকে ‘সহজ’ বলে। আর বলে, সহজ না হলে সহজকে না যায় চেনা।

[শ্রীরামকৃষ্ণ ও অভিমান ও অহংকার। “আমি যন্ত্র তিনি যন্ত্রী” ]

শ্রীরামকৃষ্ণ (মণির প্রতি) — আচ্ছা, আমার অভিমান আছে?

মণি — আজ্ঞা, একটু আছে। শরীররক্ষা আর ভক্তির-ভক্তের জন্য, — জ্ঞান-উপদেশের জন্য। তাও আপনি প্রার্থনা করে রেখেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ — আমি রাখি নাই; — তিনিই রেখে দিয়েছেন। আচ্ছা, ভাবাবেশের সময় কি হয়?

মণি — আপনি তখন বললেন, ষষ্ঠভূমিতে মন উঠে ঈশ্বরীয় রূপ দর্শন হয়। তারপর কথা যখন কন, তখন পঞ্চমভূমিতে মন নামে।

শ্রীরামকৃষ্ণ — তিনিই সব কচ্ছেন। আমি কিছুই জানি না।

মণি — আজ্ঞা, তাই জন্যই তো এত আকর্ষণ!

[Why all Scriptures — all Religions — are true — শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিরুদ্ধ শাস্ত্রের সমন্বয় ]

মণি — আজ্ঞা, শাস্ত্রে দুরকম বলেছে। এক পুরাণের মতে কৃষ্ণকে চিদাত্মা, রাধাকে চিচ্ছক্তি বলেছে। আর এক পুরাণে কৃষ্ণই কালী — আদ্যাশক্তি বলেছে।

শ্রীরামকৃষ্ণ — দেবীপুরাণের মত। এ-মতে কালীই কৃষ্ণ হয়েছেন।

“তা হলেই বা! — তিনি অনন্ত, পথও অনন্ত।”

এই কথা শুনিয়া মণি অবাক্‌ হইয়া কিয়ৎক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন।

মণি — ও বুঝেছি। আপনি যেমন বলেন, ছাদে উঠা নিয়ে কথা। যে কোন উপায়ে উঠতে পারলেই হল — দড়ি, বাঁশ — যে কোন উপায়ে।

শ্রীরামকৃষ্ণ — এইটি যে বুঝেছে, এটুকু ঈশ্বরের দয়া। ঈশ্বরের কৃপা না হলে সংশয় আর যায় না।

“কথাটা এই — কোনরকমে তাঁর উপর যাতে ভক্তি হয় — ভালবাসা হয়। নানা খবরে কাজ কি? একটা পথ দিয়ে যেতে যেতে যদি তাঁর উপর ভালবাসা হয়, তাহলেই হল। ভালবাসা হলেই তাঁকে লাভ করা যাবে। তারপর যদি দরকার হয়, তিনি সব বুঝিয়ে দিবেন — সব পথের খবর বলে দিবেন। ঈশ্বরের উপর ভালবাসা এলেই হল — নানা বিচারের দরকার নাই। আম খেতে এয়েছ, আম খাও; কত ডাল, কত পাতা — এ-সবের হিসাবের দরকার নাই। হনুমানের ভাব — ‘আমি বার তিথি নক্ষত্র জানি না — এক রামচিন্তা করি’।”

[সংসারত্যাগ ও ঈশ্বরলাভ। ভক্তের সঞ্চয় না যদৃচ্ছালাভ? ]

মণি — এখন এরূপ ইচ্ছা হয় যে, কর্ম খুব কমে যায়, — আর ঈশ্বরের দিকে খুব মন দিই।

শ্রীরামকৃষ্ণ — আহা! তা হবে বইকি!

“কিন্তু জ্ঞানী নির্লিপ্ত হয়ে সংসারে থাকতে পারে।”

মণি — আজ্ঞা, কিন্তু নির্লিপ্ত হতে গেলে বিশেষ শক্তি চাই।

শ্রীরামকৃষ্ণ — হাঁ, তা বটে। কিন্তু হয়তো তুমি (সংসার) চেয়েছিলে।

“কৃষ্ণ শ্রীমতীর হৃদয়েই ছিলেন, কিন্তু ইচ্ছা হল, তাই মানুষরূপে লীলা।

“এখন প্রার্থনা করো, যাতে এ-সব কমে যায়।

“আর মন থেকে ত্যাগ হলেই হল।”

মণি — সে যারা বাহিরে ত্যাগ করতে পারে না। উঁচু থাকের জন্য একেবারেই ত্যাগ — মনের ত্যাগ ও বাহিরের ত্যাগ।

ঠাকুর চুপ করিয়া আছেন। আবার কথা কহিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ — বৈরাগ্য মানে কি বল দেখি?

মণি — বৈরাগ্য মানে শুধু সংসারে বিরাগ নয়। ঈশ্বরে অনুরাগ আর সংসারে বিরাগ।

শ্রীরামকৃষ্ণ — হাঁ, ঠিক বলেছ।

“সংসারে টাকার দরকার বটে, কিন্তু উগুনোর জন্য অত ভেবো না। যদৃচ্ছালাভ — এই ভালো। সঞ্চয়ের জন্য অত ভেবো না। যারা তাঁকে মন প্রাণ সমর্পণ করে — যারা তাঁর ভক্ত, শরণাগত, — তারা ও-সব অত ভাবে না। যত্র আয় — তত্র ব্যয়। একদিক থেকে টাকা আসে, আর-একদিক থেকে খরচ হয়ে যায়। এর নাম যদৃচ্ছালাভ। গীতায় আছে।”

[শ্রীযুক্ত হরিপদ, রাখাল, বাবুরাম, অধর প্রভৃতির কথা ]

ঠাকুর হরিপদর কথা কহিতেছেন। — “হরিপদ সেদিন এসেছিল।”

মণি (সহাস্য) — হরিপদ কথকতা জানে। প্রহ্লাদচরিত্র, শ্রীকৃষ্ণের জন্মকথা — এ-সব বেশ সুর করে বলে।

শ্রীরামকৃষ্ণ — বটে সেদিন তার চক্ষু দেখলাম, যেন চড়ে রয়েছে। বললাম, “তুই কি খুব ধ্যান করিস?” তা মাথা হেঁট করে থাকে। আমি তখন বললাম, অত নয় রে!

সন্ধ্যা হইল। ঠাকুর মার নাম করিতেছেন ও চিন্তা করিতেছেন।

কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুরবাড়িতে আরতি আরম্ভ হইল। শ্রাবণ শুক্লা দ্বাদশী। ঝুলন-উৎসবের দ্বিতীয় দিন। চাঁদ উঠিয়াছে! মন্দির, মন্দির প্রাঙ্গণ, উদ্যান, — আনন্দময় হইয়াছে। রাত আটটা হইল। ঘরে ঠাকুর বসিয়া আছেন। রাখাল ও মাস্টারও আছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) — বাবুরাম বলে, ‘সংসার! — ওরে বাবা!’

মাস্টার — ও শোনা কথা। বাবুরাম সংসারের কি জানে?

শ্রীরামকৃষ্ণ — হাঁ, তা বটে। নিরঞ্জন দেখেছ, — খুব সরল!

মাস্টার — আজ্ঞা, হাঁ। তার চেহারেতেই আকর্ষণ করে। চোখের ভাবটি কেমন।

শ্রীরামকৃষ্ণ — শুধু চোখের ভাব নয় — সমস্ত। তার বিয়ে দেবে বলেছিল, — তা সে বলেছে, আমায় ডুবুবে কেন? (সহাস্য) হ্যাঁগা, লোকে বলে, খেটে-খুটে গিয়ে পরিবারের কাছে গিয়ে বসলে নাকি খুব আনন্দ হয়।

মাস্টার — আজ্ঞা, যারা ওইভাবে আছে, তাদের হয় বইকি!

(রাখালের প্রতি, সহাস্যে) — একজামিন হচ্ছে — leading question.

শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — মায়ে বলে, ছেলের একটা গাছতলা করে দিলে বাঁচি! রোদে ঝলসা পোড়া হয়ে গাছতলায় বসবে।

মাস্টার — আজ্ঞা, রকমারি বাপ-মা আছে। মুক্ত বাপ ছেলেদের বিয়ে দেয় না। যদি দেয় সে খুব মুক্ত! (ঠাকুরের হাস্য)।

[অধরের ও মাস্টারের কালীদর্শন। অধরের চন্দ্রনাথতীর্থ ও সীতাকুণ্ডের গল্প ]

শ্রীযুক্ত অধর সেন কলিকাতা হইতে আসিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন। একটু বসিয়া কালীদর্শন জন্য কালীঘরে গেলেন।

মাস্টারও কালীদর্শন করিলেন। তৎপরে চাঁদনির ঘাটে আসিয়া গঙ্গার কুলে বসিলেন। গঙ্গার জল জ্যোৎস্নায় ঝকঝক করিতেছে। সবে জোয়ার আসিল। মাস্টার নির্জনে বসিয়া ঠাকুরের অদ্ভুত চরিত্র চিন্তা করিতেছেন — তাঁহার অদ্ভুত সমাধি অবস্থা — মুহুর্মুহুঃ ভাব — প্রেমানন্দ — অবিশ্রান্ত ঈশ্বরকথাপ্রসঙ্গ — ভক্তের উপর অকৃত্রিম স্নেহ — বালকের চরিত্র — এই সব স্মরণ করিতেছেন। আর ভাবিতেছেন — ইনি কে — ঈশ্বর কি ভক্তের জন্য দেহ ধারণ করে এসেছেন?

অধর, মাস্টার, ঠাকুরের ঘরে ফিরিয়া গিয়াছেন। অধর চট্টগ্রামে কর্ম উপলক্ষে ছিলেন। তিনি চন্দ্রনাথ তীর্থের ও সীতাকুণ্ডের গল্প করিতেছেন।

অধর — সীতাকুণ্ডের জলে আগুনের শিখা জিহ্বার ন্যায় লকলক করে।

শ্রীরামকৃষ্ণ — এ কেমন করে হয়?

অধর — জলে ফসফরাস (phosphorus) আছে।

শ্রীযুক্ত রাম চাটুজ্যে ঘরে আসিয়াছেন। ঠাকুর অধরের কাছে তাঁর সুখ্যাতি করিতেছেন। আর বলিতেছেন, “রাম আছে, তাই আমাদের অত ভাবতে হয় না। হরিশ, লাটু, এদের ডেকে-ডুকে খাওয়ায়। ওরা হয়তো একলা কোথায় ধ্যান কচ্ছে। সেখান থেকে রাম ডেকে-ডুকে আনে।”
==========

Post a Comment

0 Comments