শ্যামপুকুর বাটীতে ডাঃ সরকার, নরেন্দ্র, মাষ্টার প্রভৃতি সঙ্গে

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত-শ্রীম কথিত
তৃতীয় ভাগ 

একবিংশ খণ্ড
শ্যামপুকুর বাটীতে শ্রীরামকৃষ্ণ

শ্যামপুকুর বাটীতে ডাঃ সরকার, নরেন্দ্র, মাষ্টার প্রভৃতি সঙ্গে

===========

প্রথম পরিচ্ছেদ

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলিকাতায় শ্যামপুকুর বাটীতে ভক্তসঙ্গে
শুক্রবার আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের সপ্তমী; ১৫ই কার্তিক; ৩০শে অক্টোবর, ১৮৮৫। শ্রীরামকৃষ্ণ শ্যামপুকুরে চিকিৎসার্থ আসিয়াছেন। দোতলার ঘরে আছেন; বেলা ৯টা; মাস্টারের সহিত একাকী কথা কহিতেছেন; মাস্টার ডাক্তার সরকারের কাছে গিয়া পীড়ার খবর দিবেন ও তাঁহাকে সঙ্গে করিয়া আনিবেন। ঠাকুরের শরীর এত অসুস্থ; — কিন্তু কেবল ভক্তদের জন্য চিন্তা!
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি, সহাস্যে) — আজ সকালে পূর্ণ এসেছিল। বেশ স্বভাব। মণীন্দ্রের প্রকৃতিভাব। কি আশ্চর্য! চৈতন্যচরিত পড়ে ওইটি মনে ধারণা হয়েছে — গোপীভাব, সখীভাব; ঈশ্বর পুরুষ আর আমি যেন প্রকৃতি।
মাস্টার — আজ্ঞা হাঁ।
পূর্ণচন্দ্র স্কুলের ছেলে, বয়স ১৫।১৬। পূর্ণকে দেখিবার জন্য ঠাকুর বড় ব্যাকুল হন, কিন্তু বাড়িতে তাহাকে আসিতে দেয় না। দেখিবার জন্য প্রথম প্রথম এত ব্যাকুল হইয়াছিলেন যে, একদিন রাত্রে তিনি দক্ষিণেশ্বর হইতে হঠাৎ মাস্টারের বাড়িতে উপস্থিত। মাস্টার পূর্ণকে বাড়ি হইতে সঙ্গে করিয়া আনিয়া দেখা করাইয়া দিয়াছিলেন। ঈশ্বরকে কিরূপে ডাকিতে হয়, — তাহার সহিত এইরূপ অনেক কথাবার্তার পর — ঠাকুর দক্ষিণেশ্বরে ফিরিয়া যান।
মণীন্দ্রের বয়সও ১৫।১৬ হইবে। ভক্তেরা তাঁহাকে খোকা বলিয়া ডাকিতেন, এখনও ডাকেন। ছেলেটি ভগবানের নামগুণগান শুনিলে ভাবে বিভোর হইয়া নৃত্য করিত।
============

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

ডাক্তার ও মাস্টার
বেলা ১০টা-১০৷৷টা। ডাক্তার সরকারের বাড়ি মাস্টার গিয়াছেন। রাস্তার উপর দোতলার বৈঠকখানার ঘরের বারান্দা, সেইখানে ডাক্তারের সঙ্গে কাষ্ঠাসনে বসিয়া কথা কহিতেছেন। ডাক্তারের সম্মুখে কাঁচের আধারে জল, তাহাতে লাল মাছ খেলা করিতেছে। ডাক্তার মাঝে মাঝে এলাচের খোসা জলে ফেলিয়া দিতেছেন। এক-একবার ময়দার গুলি পাকাইয়া খোলা ছাদের দিকে চড়ুই পাখিদের আহারের জন্য ফেলিয়া দিতেছেন। মাস্টার দেখিতেছেন।
ডাক্তার (মাস্টারের প্রতি সহাস্যে) — এই দেখ, এরা (লাল মাছ) আমার দিকে চেয়ে আছে, কিন্তু উদিকে যে এলাচের খোসা ফেলে দিইছি তা দেখে নাই, তাই বলি, শুধু ভক্তিতে কি হবে, জ্ঞান চাই। (মাস্টারের হাস্য)। ওই দেখ, চড়ুই পাখি উড়ে গেল; ময়দার গুলি ফেললুম, ওর দেখে ভয় হল। ওর ভক্তি হল না, জ্ঞান নাই বলে। জানে না যে খাবার জিনিস।
ডাক্তার বৈঠকখানার মধ্যে আসিয়া বসিলেন। চতুর্দিকে আলমারিতে স্তুপাকার বই। ডাক্তার একটু বিশ্রাম করিতেছেন। মাস্টার বই দেখিতেছেন ও একখানি লইয়া পড়িতেছেন। শেষে কিয়ৎক্ষণ পড়িতেছেন — Canon Farrar’s Life of Jesus.
ডাক্তার মাঝে মাঝে গল্প করিতেছেন। কত কষ্টে হোমিওপ্যাথিক হস্পিট্যাল্‌ হইয়াছিল, সেই সকল ব্যাপার সম্বন্ধীয় চিঠিপত্র পড়িতে বলিলেন, আর বলিলেন যে, “ওই সকল চিঠিপত্র ১৮৭৬ খ্রীষ্টাব্দের “ক্যালকাটা জার্ণাল্‌ অব মেডিসিন’-এ পাওয়া যাইবে।” ডাক্তারের হোমিওপ্যাথির উপর খুব অনুরাগ।
মাস্টার আর একখানি বই বাহির করিয়াছেন, Munger’s New Theologyz ডাক্তার দেখিলেন।
ডাক্তার — Munger বেশ যুক্তি বিচারের উপর সিদ্ধান্ত করেছে। এ তোমার চৈতন্য অমুক কথা বলেছে, কি বুদ্ধ বলেছে, কি যীশুখ্রীষ্ট বলেছে, — তাই বিশ্বাস করতে হবে, — তা নয়।
মাস্টার (সহাস্যে) — চৈতন্য, বুদ্ধ, নয়; তবে ইনি (Munger)z
ডাক্তার — তা তুমি যা বল।
মাস্টার — একজন তো কেউ বলছে। তাহলে দাঁড়ালো ইনি। (ডাক্তারের হাস্য)
ডাক্তার গাড়িতে উঠিয়াছেন, মাস্টার সঙ্গে সঙ্গে উঠিয়াছেন। গাড়ি শ্যামপুকুর অভিমুখে যাইতেছে, বেলা দুই প্রহর হইয়াছে। দুইজনে গল্প করিতে করিতে যাইতেছেন। ডাক্তার ভাদুড়ীও মাঝে মাঝে ঠাকুরকে দেখিতে আসেন; তাঁহারই কথা পড়িল।
মাস্টার (সহাস্যে) — আপনাকে ভাদুড়ী বলেছেন, ইটপাটকেল থেকে আরম্ভ করতে হবে।
ডাক্তার — সে কিরকম?
মাস্টার — মহাত্মা, সূক্ষ্ম শরীর, এসব আপনি মানেন না। ভাদুড়ী মহাশয় বোধ হয় থিয়সফিস্ট্‌। তা ছাড়া, আপনি অবতারলীলা মানেন না। তাই তিনি বুঝি ঠাট্টা করে বলেছেন, এবার মলে মানুষ জন্ম তো হবেই না; কোনও জীবজন্তু, গাছপালা কিছুই হতে পারবেন না! ইটপাটকেল থেকে আরম্ভ করতে হবে, তারপর অনেক জন্মের পর যদি কখনও মানুষ হন!
ডাক্তার — ও বাবা!
মাস্টার — আর বলছেন, আপনাদের যে Science নিয়ে জ্ঞান সে মিথ্যা জ্ঞান। এই আছে, এই নাই। তিনি উপমাও দিয়েছেন। যেমন দুটি পাতকুয়া আছে। একটি পাতকুয়ার জল নিচের Spring থেকে আসছে; দ্বিতীয় পাতকুয়ার Spring নাই, তবে বর্ষার জলে পরিপূর্ণ হয়েছে। সে জল কিন্তু বেশিদিন থাকবার নয়। আপনার Science-Hlএর জ্ঞানও বর্ষার পাতকুয়ার জলের মতো শুকিয়ে যাবে।
ডাক্তার (ঈষৎ হাসিয়া) — বটে।
গাড়ি কর্ণওয়ালিস্‌ স্ট্রীটে আসিয়া উপস্থিত হইল। ডাক্তার সরকার শ্রীযুক্ত প্রতাপ ডাক্তারকে তুলিয়া লইলেন। তিনি গতকল্য ঠাকুরকে দেখিতে গিয়াছিলেন।
============

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

ডাক্তার সরকারের প্রতি উপদেশ — জ্ঞানীর ধ্যান
ঠাকুর সেই দোতলার ঘরে বসিয়া আছেন, — কয়েকটি ভক্তসঙ্গে। ডাক্তার এবং প্রতাপের সঙ্গে কথা কহিতেছেন।
ডাক্তার (শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি) — আবার কাশি হয়েছে? (সহাস্যে) তা কশীতে যাওয়া তো ভাল। (সকলের হাস্য)
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — তাতে তো মুক্তি গো! আমি মুক্তি চাই না, ভক্তি চাই। (ডাক্তার ও ভক্তেরা হাসিতেছেন)
শ্রীযুক্ত প্রতাপ, ডাক্তার ভাদুড়ির জামাতা। ঠাকুর প্রতাপকে দেখিয়া ভাদুড়ীর গুণগান করিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (প্রতাপকে) — আহা, তিনি কি লোক হয়েছেন! ঈশ্বরচিন্তা, শুদ্ধাচার, আর নিরাকার-সাকার সব ভাব নিয়েছেন।
মাস্টারের বড় ইচ্ছা যে ইটপাটকেলের কথাটি আর একবার হয়। তিনি ছোট নরেনকে আস্তে আস্তে — অথচ ঠাকুর যাহাতে শুনিতে পান — এমন ভাবে বলিতেছেন, “ইটপাটকেলের কথাটি ভাদুড়ী কি বলেছেন মনে আছে?”
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে, ডাক্তারের প্রতি) — আর তোমায় কি বলেছেন জানো? তুমি এ-সব বিশ্বাস কর না, মন্বন্তরের পর তোমার ইটপাটকেল থেকে আরম্ভ করতে হবে। (সকলের হাস্য)
ডাক্তার (সহাস্যে) — ইটপাটকেল থেকে আরম্ভ করে অনেক জন্মের পর যদি মানুষ হই, আবার এখানে এলেই তো ইটপাটকেল থেকে আবার আরম্ভ। (ডাক্তারের ও সকলের হাস্য)
ঠাকুর একটু অসুস্থ, তবুও তাঁহার ঈশ্বরীয় ভাব হয় ও তিনি ঈশ্বরের কথা সর্বদা কন, এই কথা হইতেছে।
প্রতাপ — কাল দেখে গেলাম ভাবাবস্থা।
শ্রীরামকৃষ্ণ — সে আপনি আপনি হয়ে গিয়েছিল; বেশি নয়।
ডাক্তার — কথা আর ভাব এখন ভাল নয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ (ডাক্তারের প্রতি) — কাল যে ভাবাবস্থা হয়েছিল, তাতে তোমাকে দেখলাম। দেখলাম, জ্ঞানের আকার — কিন্তু মজক একেবারে শুষ্ক, আনন্দরস পায় নাই। (প্রতাপের প্রতি) ইনি (ডাক্তার) যদি একবার আনন্দ পান, অধঃ ঊর্ধ্ব পরিপূর্ণ দেখেন। আর ‘আমি যা বলছি তাই ঠিক, আর অন্যেরা যা বলে তা ঠিক নয়,’ — এ-সব কথা তাহলে আর বলেন না — আর হ্যাঁক-ম্যাঁক লাঠিমারা কথাগোলো আর ওঁর মুখ দিয়ে বেরোয় না!
[জীবনের উদ্দেশ্য — পূর্বকথা — ন্যাংটার উপদেশ ]
ভক্তেরা সকলে চুপ করিয়া আছেন, হঠাৎ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবাবিষ্ট হইয়া ডাক্তার সরকারকে বলিতেছেন —
“মহীন্দ্রবাবু — কি টাকা টাকা করছো! মাগ, মাগ! — মান, মান! করছো! ও-সব এখন ছেড়ে দিয়ে, একচিত্ত হয়ে ঈশ্বরেতে মন দাও! — ওই আনন্দ ভোগ করো।”
ডাক্তার সরকার চুপ করিয়া আছেন। সকলেই চুপ।
শ্রীরামকৃষ্ণ — জ্ঞানীর ধ্যানের কথা ন্যাংটা বলত। জলে জল, অধঃ ঊর্ধ্বে পরিপূর্ণ! জীব যেন মীন, জলে আনন্দে সে সাঁতার দিচ্ছে। ঠিক ধ্যান হলে এইটি সত্য সত্য দেখবে।
“অনন্ত সমুদ্র, জলেরও অবধি নাই। তার ভিতরে যেন একটি ঘট রয়েছে। বাহিরে ভিতরে জল। জ্ঞানী দেখে, — অন্তরে বাহিরে সেই পরমাত্মা। তবে ঘটটি কি? ঘট আছে বলে জল দুই ভাগ দেখাচ্ছে, অন্তরে বাহিরে বোধ হচ্ছে। ‘আমি’ ঘট থাকলে এই বোধ হয়। ওই ‘আমিটি’ যদি যায়, তাহলে যা আছে তাই, মুখে বলবার কিছু নাই।
“জ্ঞানীর ধ্যান আর কিরকম জানো? অনন্ত আকাশ, তাতে পাখি আনন্দে উড়ছে, পাখা বিস্তার করে। চিদাকাশ, আত্মা পাখি। পাখি খাঁচায় নাই, চিদাকাশে উড়ছে! আনন্দ ধরে না।”[1]
ভক্তেরা অবাক্‌ হইয়া এই ধ্যানযোগ কথা শুনিতেছেন। কিয়ৎক্ষণ পরে প্রতাপ আবার কথা আরম্ভ করিলেন।
প্রতাপ (সরকারের প্রতি) — ভাবতে গেলে সব ছায়া।
ডাক্তার — ছায়া যদি বললে, তবে তিনটি চাই। সূর্য, বস্তু আর ছায়া। বস্তু না হলে ছায়া কি! এদিকে বলছো God real আবার Creation unreal! Creation-ও real।
প্রতাপ — আচ্ছা, আরশিতে যেমন প্রতিবিম্ব, তেমনি মনরূপ আরশিতে এই জগৎ দেখা যাচ্ছে।
ডাক্তার — একটা বস্তু না থাকলে কি প্রতিবিম্ব?
নরেন — কেন, ঈশ্বর বস্তু। [ডাক্তার চুপ করিয়া রহিলেন]
[জগৎ-চৈতন্য ও Science — ঈশ্বরই কর্তা ]
শ্রীরামকৃষ্ণ (ডাক্তারের প্রতি) — একটা কথা তুমি বেশ বলেছো। ভাবাবস্থা যে মনের যোগে হয় এটি আর কেউ বলেনি। তুমিই বলেছো।
“শিবনাথ বলেছিল, বেশি ঈশ্বরচিন্তা করলে বেহেড হয়ে যায়। বলে জগৎ-চৈতন্যকে চিন্তা করে অচৈতন্য হয়। বোধস্বরূপ, যাঁর বোধে জগৎ বোধ করছে, তাঁকে চিন্তা করে অবোধ!
“আর তোমার Science — এটা মিশলে ওটা হয়; ওটা মিশলে এটা হয়; ওগুলো চিন্তা করলে বরং বোধশূন্য হতে পারে, কেবল জড়গুলো ঘেঁটে!”
ডাক্তার — ওতে ঈশ্বরকে দেখা যায়।
মণি — তবে মানুষে আরও স্পষ্ট দেখা যায়। আর মহাপুরুষে আরও বেশি দেখা যায়। মহাপুরুষে বেশি প্রকাশ।
ডাক্তার — হাঁ, মানুষেতে বটে।
শ্রীরামকৃষ্ণ — তাঁকে চিন্তা করলে অচৈতন্য! যে চৈতন্য জড় পর্যন্ত চেতন হয়েছে, হাত-পা-শরীর নড়ছে! বলে শরীর নড়ছে, কিন্তু তিনি নড়ছেন, জানে না। বলে, জলে হাত পুড়ে গেল! জলে কিছু পোড়ে না। জলের ভিতর যে উত্তাপ, জলের ভিতর যে অগ্নি তাতেই হাত পুড়ে গেল!
“হাঁড়িতে ভাত ফুটছে। আলু-বেগুন লাফাচ্ছে। ছোট ছেলে বলে আলু-বেগুনগুলো আপনি নাচছে। জানে না যে, নিচে আগুন আছে! মানুষ বলে, ইন্দ্রিয়েরা আপনা-আপনি কাজ করছে! ভিতরে যে সেই চৈতন্যস্বরূপ আছে তা ভাবে না!”
ডাক্তার সরকার গাত্রোত্থান করিলেন। এইবার বিদায় গ্রহণ করিবেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণও দাঁড়াইলেন।
ডাক্তার — বিপদে মধুসূদন। সাধে ‘তুঁহু তুঁহু’ বলায়। গলায় ওইটি হয়েছে তাই। তুমি নিজে যেমন বলো, এখন ধুনুরীর হাতে পড়েছো, ধুনুরীকে বলো। তোমারই কথা।
শ্রীরামকৃষ্ণ — কি আর বলব।
ডাক্তার — কেন বলবে না? তাঁর কোলে রয়েছি, কোলে হাগছি আর ব্যায়রাম হলে তাঁকে বলব না তবে কাকে বলব?
শ্রীরামকৃষ্ণ — ঠিক ঠিক। এক-একবার বলি। তা — হয় না।
ডাক্তার — আর বলতেই বা হবে কেন, তিনি কি জানছেন না?
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — একজন মুসলমান নমাজ করতে করতে ‘হো আল্লা’ ‘হো আল্লা’ বলে চিৎকার করে ডাকছিল। তাকে একজন লোক বললে, তুই আল্লাকে ডাকছিস তা অতো চেঁচাচ্ছিস কেন? তিনি যে পিঁপড়ের পায়ের নূপুর শুনতে পান!
[যোগীর লক্ষণ — যোগী অন্তর্মুখ — বিল্বমঙ্গল ঠাকুর ]
শ্রীরামকৃষ্ণ — তাঁতে যখন মনের যোগ হয়, তখন ঈশ্বরকে খুব কাছে দেখে। হৃদয়ের মধ্যে দেখে।
“কিন্তু একটি কথা আছে, যত এই যোগ হবে ততই বাহিরের জিনিস থেকে মন সরে আসবে। ভক্তমালে এক ভক্তের (বিশ্বমঙ্গলের) কথা আছে। সে বেশ্যালয়ে যেত। একদিন অনেক রাত্রে যাচ্ছে। বাড়িতে বাপ-মায়ের শ্রাদ্ধ হয়েছিল তাই দেরি হয়েছে। শ্রাদ্ধের খাবার বেশ্যাকে দেবে বলে হাতে করে লয়ে যাচ্ছে। তার বেশ্যার দিকে এত একাগ্র মন যে কিসের উপর দিয়ে যাচ্ছে, কোন্‌খান দিয়ে যাচ্ছে, এ-সব কিছু হুঁশ নাই। পথে এক যোগী চক্ষু বুজে ঈশ্বরচিন্তা কচ্ছিল, তাঁর গায়ে পা দিয়ে চলে যাচ্ছে। যোগী রাগ করে বলে উঠল, ‘কি তুই দেখতে পাচ্ছিস না? আমি ঈশ্বরকে চিন্তা করছি, তুই গায়ের উপর পা দিয়ে চলে যাচ্ছিস?’ তখন সে লোকটি বললে, আমায় মাপ করবেন, কিন্তু একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, বেশ্যাকে চিন্তা করে আমার হুঁশ নাই, আর আপনি ঈশ্বরচিন্তা কচ্ছেন, আপনার সব বাহিরের হুঁশ আছে! এ কিরকম ঈশ্বরচিন্তা! সে ভক্ত শেষে সংসারত্যাগ করে ঈশ্বরের আরাধনায় চলে গিয়েছিল। বেশ্যাকে বলেছিল, তুমি আমার গুরু, তুমিই শিখিয়েছ কিরকম ঈশ্বরে অনুরাগ করতে হয়। বেশ্যাকে মা বলে ত্যাগ করেছিল।”
ডাক্তার — এ তান্ত্রিক উপাসনা। জননী রমনী।
[লোকশিক্ষা দিবার সংসারীর অনধিকার ]
শ্রীরামকৃষ্ণ — দেখ, একটা গল্প শোন। একজন রাজা ছিল। একটি পণ্ডিতের কাছে রাজা রোজ ভাগবত শুনত। প্রত্যহ ভাগবত পড়ার পর পণ্ডিত রাজাকে বলত, রাজা বুঝেছ? রাজাও রোজ বলত, তুমি আগে বোঝ! ভাগবতের পণ্ডিত বাড়ি গিয়ে রোজ ভাবে যে, রাজা রোজ এমন কথা বলে কেন! আমি রোজ এত করে বোঝাই আর রাজা উলটে বলে, তুমি আগে বোঝ! পণ্ডিতটি সাধন-ভজন করত। কিছুদিন পরে তাঁর হুঁশ হল যে ঈশ্বরই বস্তু, আর সব — গৃহ পরিবার, ধন, জন, মানসম্ভ্রম সব অবস্তু। সংসারে সব মিথ্যা বোধ হওয়াতে সে সংসারত্যাগ করলে। যাবার সময় কেবল একজনকে বলে গেল যে, রাজাকে বলো যে এখন আমি বুঝেছি।
“আর একটি গল্প শোন। একজনের একটি ভাগবতের পণ্ডিত দরকার হয়েছিল, — পণ্ডিত এসে রোজ শ্রীমদ্ভাগবতের কথা বলবে। এখন ভাগবতের পণ্ডিত পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খোঁজার পর একটি লোক এসে বললে, মহাশয়, একটি উৎকৃষ্ট ভাগবতের পণ্ডিত পেয়েছি। সে বললে, তবে বেশ হয়েছে, — তাঁকে আন। লোকটি বললে, একটু কিন্তু গোল আছে। তার কয়খানা লাঙ্গল আর কয়টা হেলে গরু আছে — তাদের নিয়ে সমস্ত দিন থাকতে হয়, চাষ দেখতে হয়, একটুও অবসর নাই। তখন যার ভাগবতের পণ্ডিতের দরকার সে বললে ওহে, যার লাঙ্গল আর হেলে গরু আছে, এমন ভাগবতের পণ্ডিত আমি চাচ্ছি না, — আমি চাচ্ছি এমন লোক যার অবসর আছে, আর আমাকে হরিকথা শুনাতে পারেন। (ডাক্তারের প্রতি) বুঝলে?”
ডাক্তার চুপ করিয়া রহিলেন।
[শুধু পাণ্ডিত্য ও ডাক্তার ]
শ্রীরামকৃষ্ণ — কি জানো, শুধু পাণ্ডিত্যে কি হবে? পন্ডিতেরা অনেক জানে-শোনে — বেদ, পুরাণ, তন্ত্র। কিন্তু শুধু পাণ্ডিত্যে কি হবে? বিবেক-বৈরাগ্য চাই। বিবেক-বৈরাগ্য যদি থাকে, তবে তার কথা শুনতে পারা যায়। যারা সংসারকে সার করেছে, তাদের কথা নিয়ে কি হবে!
“গীতা পড়লে কি হয়? দশবার ‘গীতা গীতা’ বললে যা হয়। ‘গীতা গীতা’ বলতে বলতে ‘ত্যাগী’ হয়ে যায়। সংসারে কামিনী-কাঞ্চনে আসক্তি যা ত্যাগ হয়ে গেছে, যে ঈশ্বরেতে ষোল আনা ভক্তি দিতে পেরেছে, সেই গীতার মর্ম বুঝেছে। গীতা সব বইটা পড়বার দরকার নাই। ‘ত্যাগী’ বলতে পারলেই হল।”
ডাক্তার — ‘ত্যাগী’ বলতে গেলেই একটা য-ফলা আনতে হয়।
মণি — তা য-ফলা না আনলেও হয়, নবদ্বীপ গোস্বামী ঠাকুরকে বলেছিলেন। ঠাকুর পেনেটিতে মহোৎসব দেখতে গিয়েছিলেন, সেখানে নবদ্বীপ গোস্বামীকে এই গীতার কথা বলেছিলেন। তখন গোস্বামী বললেন, তগ্‌ ধাতু ঘঙ্‌ ‘তাগ’ হয়, তার উত্তর ইন্‌ প্রত্যয় করলে ত্যাগী হয়, ত্যাগী ও তাগী এক মানে।
ডাক্তার — আমায় একজন রাধা মানে বলেছিল। বললে, রাধা মানে কি জানো? কথাটা উল্‌টে নাও অর্থাৎ ‘ধারা, ধারা’। (সকলের হাস্য)
(সহাস্যে) – “আজ ‘ধারা’ পর্যন্তই রহিল।”
————
[1] cf. Shelley’s Skylark
============

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

ঐহিক জ্ঞান বা Science
ডাক্তার চলিয়া গেলেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে মাস্টার বসিয়া আছেন ও একান্তে কথা হইতেছে। মাস্টার ডাক্তারের বাড়িতে গিয়াছিলেন, সেই সব কথা হইতেছিল।
মাস্টার (শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি) — লাল মাছকে এলাচের খোসা দেওয়া হচ্ছিল, আর চড়ুই পাখীদের ময়দার গুলি। তা বলেন, ‘দেখলে, ওরা এলাচের খোসা দেখেনি, তাই চলে গেল! আগে জ্ঞান তাই তবে ভক্তি। দুই-একটা চড়ুইও ময়দার ডেলা ছোড়া দেখে পালিয়ে গেল। ওদের জ্ঞান নাই, তাই ভক্তি হল না।’
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — ও জ্ঞানের মানে ঐহিক জ্ঞান — ওদের Science-এরHl জ্ঞান।
মাস্টার — আবার বললেন, ‘চৈতন্য বলে গেছে, কি বুদ্ধ বলে গেছে, কি যীশুখ্রীষ্ট বলে গেছে, তবে বিশ্বাস করব! তা নয়!’
“এক নাতি হয়েছে, — তা বউমার সুখ্যাতি করলেন। বললেন, একদিনও বাড়িতে দেখতে পাই না, এমনি শান্ত আর লজ্জাশীলা –”
শ্রীরামকৃষ্ণ — এখানকার কথা ভাবছে। ক্রমে শ্রদ্ধা হচ্ছে। একেবারে অহংকার কি যায় গা! অত বিদ্যা, মান! টাকা হয়েছে! কিন্তু এখানকার কথাতে অশ্রদ্ধা নেই।
==========

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

অবতীর্ণ শক্তি বা সদানন্দ
বেলা ৫টা। শ্রীরামকৃষ্ণ সেই দোতলার ঘরে বসিয়া আছেন। চতুর্দিকে ভক্তেরা চুপ করিয়া বসিয়া আছেন। তন্মধ্যে অনেকগুলি বাহিরের লোক তাঁহাকে দেখিতে আসিয়াছেন। কোন কথা নাই।
মাস্টার কাছে বসিয়া আছেন। তাঁহার সঙ্গে নিভৃতে এক-একটি কথা হইতেছে। ঠাকুর জামা পরিবেন — মাস্টার জামা পরাইয়া দিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) — দেখো, এখন আর বড় ধ্যান-ট্যান করতে হয় না। অখণ্ড একবারে বোধ হয়ে যায়। এখন কেবল দর্শন।
মাস্টার চুপ করিয়া আছেন। ঘরও নিস্তব্ধ।
কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর তাহাকে আবার একটি কথা বলিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ — আচ্ছা, এরা যে সব একাসনে চুপ করে বসে আছে, আর আমায় দেখে — কথা নাই, গান নাই; এতে কি দেখে?
ঠাকুর কি ইঙ্গিত বরিতেছেন যে, সাক্ষাৎ ঈশ্বরের শক্তি অবতীর্ণ — তাই এত লোকের আকর্ষণ, তাই ভক্তেরা অবাক্‌ হইয়া তাঁহার দিকে তাকাইয়া থাকে!
মাস্টার উত্তর করিলেন — আজ্ঞে, এরা সব আপনার কথা অনেক আগে শুনেছে, আর দেখে — যা কখনও ওরা দেখতে পায় না — সদানন্দ বালকস্বভাব, নিরহংকার, ঈশ্বরের পেমে মাতোয়ারা! সেদিন ঈশান মুখুজ্জের বাড়ি আপনি গিছিলেন; সেই বাহিরের ঘরে পায়চারি কচ্ছিলেন; আমরাও ছিলাম, একজন আপনাকে এসে বললে, এমন ‘সদানন্দ পুরুষ’ কোথাও দেখি নাই।
মাস্টার আবার চুপ করিয়া রহিলেন। ঘর আবার নিস্তব্ধ! কিয়ৎকাল পরে ঠাকুর আবার মৃদুস্বরে মাস্টারকে কি বলিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ — আচ্ছা, ডাক্তারের কিরকম হচ্ছে? এখানকার কথা সব কি বেশ নিচ্ছে?
মাস্টার — এ অমোঘ বীজ কোথায় যাবে, একবার না একবার একদিক দিয়ে বেরোবে। সেদিনকার একটা কথায় হাসি পাচ্ছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ — কি কথা?
মাস্টার — সেদিন বলেছিলেন, যদু মল্লিকের খাবার সময় কোন্‌ ব্যঞ্জনে নুন হয়েছে, কোন্‌ ব্যঞ্জনে হয়নি এ বুঝতে পারে না; এত অন্যমনস্ক! কেউ যদি বলে দেয় এ ব্যঞ্জনে নুন হয় নাই, তখন এ্যাঁ এ্যাঁ করে বলে, ‘নুন হয় নাই?’ ডাক্তারকে এই কথাটি শোনাচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন কিনা যে, আমি এত অন্যমনস্ক, হয়ে যাই। আপনি বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন যে, সে বিষয়চিন্তা করে অন্যমনস্ক ঈশ্বরচিন্তা করে নয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ — ওগুলো কি ভাববে না?
মাস্টার — ভাববেন বইকি। তবে নানা কাজ, অনেককথা ভুলে যায়। আজকেও বেশ বললেন, তিনি যখন বললেন, ‘ও তান্ত্রিকের উপাসনা। — জননী রমণী।’
শ্রীরামকৃষ্ণ — আমি কি বললুম?
মাস্টার — আপনি বললেন, হেলে গরুওয়ালা ভাগবত পণ্ডিতের কথা। (শ্রীরামকৃষ্ণের হাস্য) আর বললেন, সেই রাজার কথা যে বলেছিল, ‘তুমি আগে বোঝ!’ (শ্রীরামকৃষ্ণের হাস্য)
“আর বললেন, গীতার কথা। গীতার সার কথা কামিনী-কাঞ্চনত্যাগ, — কামিনী-কাঞ্চনে আসক্তি ত্যাগ। ডাক্তারকে আপনি বললেন যে সংসারী হয় (ত্যাগী না হয়ে) ও আবার কি শিক্ষা দেবে? তাতে তিনি বুঝতে বোধ হয় পারেন নাই। শেষে ‘ধারা’ ‘ধারা’ বলে চাপা দিয়ে গেলেন।”
ঠাকুর ভক্তের জন্য চিন্তা করিতেছেন; — পূর্ণ বালক ভক্ত, তাঁহার জন্য। মণীন্দ্রও বালক ভক্ত; ঠাকুর তাঁহাকে পূর্ণের সঙ্গে আলাপ করিতে পাঠাইলেন।
==========

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

শ্রীরাধাকৃষ্ণতত্ত্বপ্রসঙ্গে — ‘সব সম্ভবে’ নিত্যলীলা
সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরে আলো জ্বলিতেছে। কয়েকটি ভক্ত ও যাঁহারা ঠাকুরকে দেখিতে আসিয়াছেন, তাঁহারা সেই ঘরে একটু দূরে বসিয়া আছেন। ঠাকুর অন্তর্মুখ — কথা কহিতেছেন না। ঘরের মধ্যে যাঁহারা আছেন, তাঁহারাও ঈশ্বরকে চিন্তা করিতে করিতে মৌনাবলম্বন করিয়া আছেন।
কিয়ৎক্ষণ পরে নরেন্দ্র একটি বন্ধুকে সঙ্গে করিয়া আনিলেন। নরেন্দ্র বলিলেন, ইনি আমার বন্ধু, ইনি কয়েকখানি গ্রন্থ রচনা করিয়াছেন, ইনি ‘কিরণ্ময়ী’ লিখেন। ‘কিরণ্ময়ী’ লেখক প্রণাম করিয়া আসন গ্রহণ করিলেন। ঠাকুরের সঙ্গে কথা কহিবেন।
নরেন্দ্র — ইনি রাধাকৃষ্ণের বিষয় লিখেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (লেখকের প্রতি) — কি লিখেছো গো, বল দেখি।
লেখক — রাধাকৃষ্ণই পরব্রহ্ম, ওঁকারের বিন্দুস্বরূপ। সেই রাধাকৃষ্ণ পরব্রহ্ম থেকে মহাবিষ্ণু, মহাবিষ্ণু থেকে পুরুষ-প্রকৃতি, — শিব-দুর্গা।
শ্রীরামকৃষ্ণ — বেশ! নিত্যরাধা নন্দ ঘোষ দেখেছিলেন। প্রেমরাধা বৃন্দাবনে লীলা করেছিলেন, কামরাধা চন্দ্রাবলী।
“কামরাধা, প্রেমরাধা। আরও এগিয়ে গেলে নিত্যরাধা। প্যাঁজ ছাড়িয়ে গেলে প্রথমে লাল খোসা, তারপরে ঈসৎ লাল, তারপরে সাদা, তারপরে আর খোসা পাওয়া যায় না। ওইটি নিত্যরাধার স্বরূপ — যেখানে নেতি নেতি বিচার বন্ধ হয়ে যায়!
“নিত্য রাধাকৃষ্ণ, আর লীলা রাধাকৃষ্ণ। যেমন সূর্য আর রশ্মি। নিত্য সূর্যের স্বরূপ, লীলা রশ্মির স্বরূপ।
“শুদ্ধভক্ত কখনও নিত্যে থাকে, কখন লীলায়।
“যাঁরই নিত্য তাঁরই লীলা। দুই কিংবা বহু নয়।”
লেখক — আজ্ঞে, ‘বৃন্দাবনের কৃষ্ণ’ আর ‘মথুরার কৃষ্ণ’ বলে কেন?
শ্রীরামকৃষ্ণ — ও গোস্বামীদের মত। পশ্চিমে পণ্ডিতেরা তা বলে না। তাদের কৃষ্ণ এক, রাধা নাই। দ্বারিকার কৃষ্ণ ওইরকম।
লেখক — আজ্ঞে, রাধাকৃষ্ণই পরব্রহ্ম।
শ্রীরামকৃষ্ণ — বেশ! কিন্তু তাঁতে সব সম্ভবে! সেই তিনিই নিরাকার সাকার। তিনিই স্বরাট বিরাট! তিনিই ব্রহ্ম, তিনিই শক্তি!
“তাঁর ইতি নাই, — শেষ নাই; তাঁতে সব সম্ভবে। চিল-শকুনি যত উপরে উঠুক না কেন, আকাশ গায়ে ঠেকে না। যদি জিজ্ঞাসা কর ব্রহ্ম কেমন — তা বলা যায় না। সাক্ষাৎকার হলেও মুখে বলা যায় না। যদি জিজ্ঞাসা কেউ করে, কেমন ঘি? তার উত্তর, — কেমন ঘি, না যেমন ঘি। ব্রহ্মের উপমা ব্রহ্ম। আর কিছুই নাই।”
===========

Post a Comment

0 Comments