পরমাপ্রকৃতি শ্রীশ্রী সারদামণি - অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
ভূমিকা
ভগবানের কাছে আমরা কী চাই? চাই অহেতুকী কৃপা। আর, ভগবান আমাদের কাছে কী চান? চান অমলা অনিমিত্তা ভক্তি। অকারণের ভালােবাসা।
যেমন ভালােবাসা প্রহ্লাদের। ধ্রুব যে তপস্যা করেছিল, বিমাতার দুর্বাক্যে বিদ্ধ হয়ে, মনে অভিমান নিয়ে, রাজ্যলাভের আকাঙ্ক্ষায়। কাঁচ কুড়ােতে এসে মণি পেয়ে গেল। তণ্ডুল যা পেল তা সত্যুষ তণ্ডুল, কামনার দাগ-ধরা। কিন্তু প্রহ্লাদ যে কেন ঈশ্বরকে ভালােবাসে তা সে নিজেও জানে না। হাতির পায়ের নিচে ফেলছে তখনও হরি, পাহাড়ের চড়া থেকে ফেলছে তখনও হরি। তারপর যখন হিরণ্যকশিপু নিহত হল ভগবান প্রহ্লাদকে বর দিতে চাইলেন। প্রহ্লাদ বললে, আমি কি বণিক, আমি কি ব্যবসা করতে বসেছি? আমি তােমাকে ভালােবেসেছি বিনিময়ে কিছু লাভ করবার জন্যে?
সংসারে এমনিধারা কিছু না চেয়ে অপ্রয়ােজনে ভালােবাসি আমরা কাকে? একমাত্র মাকে। সন্তান যখন মাকে ভালােবাসে, জিগগেসও করে না , মা, তুমি কি রুপসী, না, বিদুষী, বা, তােমার ক্যাশবাক্সে কত টাকা আছে, বা, তােমার সােয়ামী কী চাকরি করে! তার মা আছে এই তার ঐশ্বর্য। চীরবাসা ভিখারিনী যে মা, তার কোল ছেড়ে তার শিশু যায় না। কোনাে হাত-বাড়ানাে রাজেন্দ্রাণীর কোলে।
ভগবানকে যাতে আমরা অহেতুক ভালােবাসতে পারি তারই জন্যে শ্রীরামকৃষ্ণ ‘মা’-মন্ত্র রচনা করেছেন। আর, তিনি শুধু মন্ত্রই দেননি, সঙ্গে-সঙ্গে দিয়েছেন তার বিগ্রহ। ‘মা’-মন্ত্রের ঘনীভূত মূর্তিই হচ্ছেন সারদামণি। শ্রীরামকৃষ্ণের সমস্ত বাক্যের ব্যাখ্যা, সমস্ত কর্মের মূলমর্ম।
সংসারে সঙও আছে সারও আছে। মায়াও আছে বস্তুও আছে। সার যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা মাতৃত্ব ছাড়া আর কি। আর, এই সার যিনি দেন তিনিই সারদা। শ্রীরামকৃষ্ণের সমস্ত সাধনার সারভূতা প্রতিমা।
মা যখন সন্তানকে মারেন সন্তান তখনও মাকেই জড়িয়ে ধরে, তখনও মা-মা বলেই কাঁদে। কেননা সে জানে যে নয়ন তিনি অশ্রু দিয়ে ভরেছেন সেই নয়নই তিনি আবার স্নেহচুম্বনে ভরে দেবেন।
বইটি অনলাইনে পড়তে ও PDF Download করতে নিচে দেখুনঃ-
---------
*******
0 Comments