গুরুভ্রাতাদের কণ্ঠ দিয়ে আমার বাণী প্রচারিত হবে।।স্বামী বিবেকানন্দ

গুরুভ্রাতাদের কণ্ঠ দিয়ে আমার বাণী প্রচারিত হবে। 

গুরুভ্রাতাদের কণ্ঠ দিয়ে আমার বাণী প্রচারিত হবে।স্বামী বিবেকানন্দ


স্বামী অভেদানন্দ স্মৃতিকথাঃ-

গুরুভাইদের প্রতি স্বামীজীর কী ভালবাসা এবং বিশ্বাসই না ছিল। তিনিই তো ঠাকুরের অবর্তমানে তাঁর ভালবাসা ও বিশ্বাস দিয়ে গুরুভাইদের সকলকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছিলেন। কত রকম মজাই না তিনি করতেন গুরুভাইদের সঙ্গে । আমাকে আর শরৎ মহারাজকে ম্বামীজী আদর করে বলতেন ‘কালুয়া’ আর ‘ভুলুয়া’। লন্ডনের কাজের জন্যে যখন তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন তখন আমি একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। কিম্তু গুরুভায়েরাও ছাঁড়লেন না। তাছাড়া স্বামীজীর আহ্বান-তা আমি মাথা পেতে নিলাম, সুতরাং যেতে হলো । স্বামীজী চাইতেন গুরুভায়েরা সকলেই বড় হোক এবং তা হোক নিজেদের শক্তিতেই। 

লন্ডনে পৌঁছান পর থেকেই স্বামীজী দৃঢ়ভাবে আমাকে বলেছিলেন, "নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হবে তোমাকে । আমার উপর নির্ভর করা চলবে না।” বিদেশে গিয়েই স্বামীজীর এ কথা শুনে স্বভাবতই আমি কিছুটা 'বিস্মিত হয়েছিলাম। লন্ডনে আমার প্রথম বক্তৃতা আমাকে না জানিয়েই স্বামীজী আমন্ত্রণ পত্রে ছাপিয়ে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। 

জানতে পেরে আমি বললাম, “আমি কি করে লেকচার দেব? কি বলব আমি তো কিছুই জানি না।” সমস্ত দিন ধরে ঝুটোপুটি চলল । স্বামীজীর এক কথা“ঘোষণা হয়ে গিয়েছে তোমাকে বলতেই হবে ।

তখন আমি বললাম, “তবে শিখিয়ে দাও কিরকম করে আরম্ভ করতে হয়, কিরকম করে শেষ করতে হয়।” 

তখন বললেন,“আমাকে কে শিখিয়েছিল? যাঁর মুখ দেখে আমি বলেছি, তুমিও তাঁকে দেখেই বল ।”

হলোও তাই। দাঁড়ান মাত্র পায়ের বুড়ো আগুল থেকে মাথা পর্যন্ত একটা ইলেকট্রিক কারেন্ট বয়ে গেল। লোকে কি বলবে এই ভয় হলো। যাই হোক সেটাকে দাবিয়ে রেখে বলে গেলাম । দেখি স্বামীজি খুব মাথা নাড়ছেন । আমার দেখে ভয় হলো কি বুঝি ভুল হয়েছে। আমার বলা হয়ে গেলে স্বামীজী খুব প্রশংসা করলেন। 

আনন্দে ডগমগ হয়ে বললেন, “এই হলো বেদান্ত চর্চার ফল বুঝলে?" আমাকে বললেন, “you have a resonant voice which has Carrying Power too”( তোমার কণ্ঠস্বর মধুর এবং শ্রোতাদের মনকে টেনে নিয়ে যাবার শক্তিও তার আছে ) 

তারপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “আমি যখন বলছিলাম তখন অত মাথা নাড়ছিলে কেন? বললেন, “খুব আনন্দ হচ্ছিল তাই।” 

আমার বক্তৃতার পর সেই সভাতে সেদিন স্বামীজী বলেছিলেন, “Even if I perish out of this plane, my message will be sounded through these dear leaps and the world will hear it” (যদি আমি পৃথিবী থেকে চলে যাই তাহলে আমার এই প্রিয় গুরুভ্রাতার কণ্ঠ দিয়ে আমার বাণী প্রচারিত হবে এবং জগৎ তা শুনতে পাবে )।

গ্রন্থসূত্রঃ- স্মৃতির আলোয় স্বামীজী, স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ

Post a Comment

0 Comments